তানিউল করিম জীম, বাকৃবি: দুগ্ধশিল্পের একটি প্রধান উপজাত ছানার পানি, যাকে দুধের হোয়েও (ডযবু) বলা হয়। দুধ থেকে ছানা আলাদা করার পর সবুজাভ জলীয় অংশ পাওয়া এ দুধের হোয়ে দিয়ে স্বাস্থ্যকর পানীয় উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক।
ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে গবেষক দলে রয়েছেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম ও প্রভাষক মো. জাকিরুল ইসলাম।
গবেষকরা বলছেন, ‘দুধের উপজাত হোয়ে পানি ল্যাকটোজ, অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ পদার্থসহ নানা পুষ্টিকর উপাদানের ভালো উৎস।’
গবেষণায় তারা হোয়ে পানির সঙ্গে বিভিন্ন ফলের জুসের মিশ্রণে ও নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবিয়াল গাজনের মাধ্যমে (Lactobacillus acidophilus LA-5,ATCC 4, June ৪৩৫৬) প্রোবায়োটিক পানীয় তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গবেষক দল হোয়ে পানির সঙ্গে আনারসের জুসের মিশ্রণে স্বাস্থ্যসম্মত একটি প্রোবায়োটিক অর্থাৎ হজমে সহায়ক ব্যাকটেরিয়া-সংবলিত পানীয় উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছে।
গবেষণাটি আন্তর্জাতিক জার্নাল Journal of Agriculture and Food Research, Elsevier, Volume 4, June ২০২১, ১০০১৪৪-এ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষক দল হোয়ে পানি ও আনারসের জুসের নানা অনুপাতের মিশ্রণ নিয়ে গবেষণা করে। গবেষণায় ২৫ ভাগ হোয়ে পানির সঙ্গে ৭৫ ভাগ আনারসের জুসের মিশ্রণটি সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সাল থেকে গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়ে আসছে।
অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘হোয়ে পানি দিয়ে বানানো প্রোবায়োটিক পানীয়টিতে আনারসের জুসও ব্যবহার করা হয়েছে। আনারসে ব্রোমিলিন নামে একটি এনজাইম থাকে, যা মানুষের খাবার হজমে সহায়তা করে। এছাড়া আনারসে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন (ভিটামিন এ, বি ও সি), খনিজ পদার্থ (ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও আয়রন) বিদ্যমান। তাই উদ্ভাবিত প্রোবায়োটিক পানীয়টি খুবই স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিমানসম্পন্ন।’
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ভোক্তারা স্বাস্থ্যসচেতন। তাই প্রোবায়োটিক পানীয় হিসেবে এটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হচ্ছে। উদ্ভাবিত এ প্রোবায়োটিক পানীয়টি একদিকে দুগ্ধশিল্পের উপজাত নিয়ন্ত্রণের ভালো সমাধান, অন্যদিকে মানুষের জন্য হবে একটি পুষ্টিকর ও কার্যকর কোমল পানীয়।
মো. জাকিরুল ইসলাম জানান, উদ্ভাবিত প্রোবায়োটিক পানীয়তে ছয় থেকে সাত সপ্তাহ পর্যন্ত উপকারী প্রোবায়োটিক সেল বেঁচে থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই উদ্ভাবিত প্রোবায়োটিক পানীয়টি চার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ছয় থেকে সাত সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। এ সময়ের মধ্যে ভোক্তারা প্রোবায়োটিক পানীয় পান করে উপকৃত হবেন।
বর্তমানে প্রোবায়োটিক পানীয়টির বাণিজ্যিক উৎপাদন ও সম্প্রসারণের সম্ভাব্যতা নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।