Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:08 am

ছুটির দিনেও রেকর্ড ২ হাজার ৫১ মেগাওয়াট লোডশেডিং!

ইসমাইল আলী:সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র বা শনিবার) বা অন্য ছুটির দিন সাধারণত বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কম থাকে। এজন্য ওই দিনগুলোয় লোডশেডিং করা হয় না। আর হলেও তা খুবই কম। তবে গত ৭ অক্টোবর ছিল এর ব্যতিক্রম। ওইদিন রেকর্ড দুই হাজার ৫১ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়। যদিও গত তিন দিন ধরেই লোডশেডিং বেড়ে চলেছে। তবে শুক্রবার সারাদিনই রাজধানীসহ সারাদেশে প্রচুর লোডশেডিং হয়। সেদিন দুপুরে এর পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সপ্তাহে মঙ্গলবার গ্রিড বিপর্যয়ে ধাক্কা সামলে ওঠা গেলেও লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এর মূল কারণ, গ্যাস ও তেল সংকট। এ কারণে গত শুক্রবার ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি ও ৩৯টি কেন্দ্র আংশিক বন্ধ ছিল। এর বাইরে মেইনটেন্যান্স ও কারিগরি ক্রটির কারণেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ কারণে ৫৩টি কেন্দ্র আংশিক ও পাঁচটি পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

তথ্যমতে, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অধীনে বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১৫০টি। এগুলোর বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতা (আমদানিসহ) ২১ হাজার ৭১০ মেগাওয়াট। তবে গত ৭ অক্টোবর পিক আওয়ারে (রাত ৮টা)

উৎপাদন করা হয়েছে ১১ হাজার ৮৯৯ মেগাওয়াট। যদিও সে সময় চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট।

৫-৭ অক্টোবরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিন দিনে লোডশেডিং অনেকটা বেড়েছে। এর মধ্যে ৫ অক্টোবর (বুধবার) রাত ১২টায় সর্বোচ্চ এক হাজার ৮০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়। ৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয় বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে। ওই সময় লোডশেডিং ছিল এক হাজার ৮২৮ মেগাওয়াট। ৭ অক্টোবর (শুক্রবার) বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ লোডশেডিং করা হয়। ওই সময় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৫১ মেগাওয়াট।

শুক্রবার (বৃহস্পতিবার দিবাগত) রাত ১২টায় লোডশেডিং করা হয় ৭৯২ মেগাওয়াট, ১টায় এক হাজার ৬৬১ মেগাওয়াট, ২টায় এক হাজার ৬৯৫ মেগাওয়াট, ৩টায় এক হাজার ৬৫৩ মেগাওয়াট, ৪টায় এক হাজার ৫৮৬ মেগাওয়াট, ভোর ৫টায় এক হাজার ৪৯০ মেগাওয়াট, ৬টায় এক হাজার ৩৬৫ মেগাওয়াট, সকাল ৭টায় এক হাজার ১৬৭ মেগাওয়াট, ৮টায় এক হাজার ২৬২ মেগাওয়াট, ৯টায় এক হাজার ২৫২ মেগাওয়াট, ১০টায় এক হাজার ৬৯৯ মেগাওয়াট ও বেলা ১১টায় এক হাজার ৯০৫ মেগাওয়াট।

ওইদিন দুপুর ১২টায় লোডশেডিং করা হয় এক হাজার ৯৮৬ মেগাওয়াট, দুপুর ১টায় দুই হাজার ৪৬ মেগাওয়াট, ২টায় দুই হাজার ৪৬ মেগাওয়াট, ৩টায় দুই হাজার ৫১ মেগাওয়াট, ৪টায় দুই হাজার ২৭ মেগাওয়াট, বিকাল ৫টায় এক হাজার ৯১২ মেগাওয়াট, সন্ধ্যা ৬টায় এক হাজার ৭০৫ মেগাওয়াট, ৭টায় এক হাজার ৫২২ মেগাওয়াট, রাত ৮টায় ৯৬৪ মেগাওয়াট, ৯টায় ৯৭৪ মেগাওয়াট, ১০টায় ৮০১ মেগাওয়াট, ১১টায় এক হাজার ২০ মেগাওয়াট ও ১২টায় এক হাজার ৬৯৮ মেগাওয়াট।

৭ অক্টোবর বিদ্যুৎ উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওইদিন ৬৩টি কেন্দ্র পুরোপুরি ও ৪৪টি কেন্দ্র আংশিক বন্ধ ছিল। এর মধ্যে গ্যাস সংকটের কারণে পুরোপুরি বন্ধ ছিল সাতটি ও আংশিক বন্ধ ছিল ১৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। একইভাবে জ্বালানি তেল সংকটের কারণে পুরোপুরি বন্ধ ছিল তিনটি ও আংশিক বন্ধ ছিল ২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র।

জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতে দৈনিক গ্যাস দরকার দুই হাজার ২৫২ এমএমসিএফ। তবে পেট্রোবাংলা থেকে সরবরাহ করা হয় দৈনিক এক হাজার এমএমসিএফের চেয়ে কম। তাই গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বড় অংশ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ফার্নেস অয়েলচালিত বেসরকারি কেন্দ্রগুলো নিজেরাই তেল আমদানি করে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় গত মার্চ থেকে নিয়মিত ভর্তুকির অর্থ ছাড় করছে না। ফলে তেল আমদানির বিলও কোম্পানিগুলোকে নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি ক্যাপাসিটি চার্জ বকেয়া পড়েছে। এতে কয়েকটি কোম্পানি তেল আমদানি বন্ধ রেখেছে। ফলে ফার্নেস অয়েলচালিত কয়েকটি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে মেইনটেন্যান্সের (রক্ষণাবেক্ষণ) জন্য ৭ অক্টোবর ১৬টি কেন্দ্র পুরোপুরি ও একটি কেন্দ্র আংশিক বন্ধ ছিল। আর কারিগরি ত্রুটিতে ৩৫টি কেন্দ্র আংশিক ও একটি কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনওভার লোড থাকায় দুটি কেন্দ্র পুরোপুরি ও তিনটি কেন্দ্র আংশিক বন্ধ ছিল।

পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। এজন্য সবসময়ই কিছু কেন্দ্র বন্ধ থাকে। তবে গ্রিড বিপর্যয়ের পর আরও দুই-তিনটি কেন্দ্র এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এগুলোয় এখনও উৎপাদন শুরু করা যায়নি। এছাড়া কারিগরি ত্রুটির জন্য কিছু কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। তবে রামপালসহ কয়েকটি বড় কেন্দ্র দ্রুত উৎপাদনে আসবে। এছাড়া চলতি মাসের শেষ দিকে তাপমাত্রা কমে এলে চাহিদাও কিছুটা কমবে। আর রক্ষণাবেক্ষণাধীন কেন্দ্র কয়েকটি চালু করা গেলে সমস্যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যাবে।