নানা রকমের ক্রোকারিজ সামগ্রী, বাহারি রঙের কাপড়-চোপড়, নিত্য ব্যবহার্য ক্ষুদ্র গৃহস্থালি জিনিস ও শো-পিস, বাচ্চাদের খেলনাসহ প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় নানা অনুষঙ্গ নিয়ে চলছে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। এর উদ্যোগ নিয়েছে চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। মেলাটি চলছে মহানগরীর রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে। মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে থাকা ৪৫০টি উৎপাদন, বিক্রয়, বিপণন ও সেবাদানকারী স্টলে নানা পণ্যের সমাহার চোখে পড়ছে। আগত ক্রেতা ও দর্শনার্থীর কেউ কিনছেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, কেউবা দেখছেন পছন্দের ব্যবহার্য জিনিস। আর প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়-প্রদর্শনকর্মীরা সমান তালে ব্যস্ত পণ্যের গুণাগুণ ও সুবিধা-অসুবিধা বয়ানে। এ যেন নগরে ক্রেতা-বিক্রেতার মেলবন্ধন।
চট্টগ্রাম মহানগরীর রাহাত্তারপুল এলাকার বাসিন্দা কুলসুম আহমদ গত শুক্রবার আসেন মেলায়। পারটেক্স, আকতারসহ বেশ কয়েকটি স্টলে ঘুরছেন স্বামীকে নিয়ে। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, নতুন বাসায় উঠব বলে গৃহসজ্জার উপকরণ দেখতে এসেছি ছুটির দিনে। পছন্দ হলে কিনব কিংবা অর্ডার করে যাব। শুধু তিনিই নন, তার মতো আরও অনেক মানুষ নিজেদের পছন্দ ও প্রয়োজনের সব জিনিসপত্র যাচাই-বাছাই করছেন ঘুরে ঘুরে। আরএফএলের এক বিক্রয়কর্মী বলেন, স্বল্পদামে ভালো মানের প্লাস্টিকের বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী পেতে আমাদের এখানে ক্রেতা সাধারণের ভিড় চোখে পড়ার মতো। প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে বিক্রি না হলেও এ মেলা আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য সুনাম তৈরিতে সহযোগিতা করছে। অপরদিকে ব্রাদার্স ফার্নিচারের বিক্রয়কর্মী আমিনুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্যমেলা উপলক্ষে আমাদের ফার্নিচারগুলোর ওপর পাঁচ থেকে ১৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আর শহরের মধ্যে হলে ফ্রি ডিলিভারিতে সরবরাহ করা ব্যবস্থাও আছে।
কিষোয়ান প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী বলেন, এ মেলায় আমাদের পণ্য বিক্রি করার চেয়ে প্রদর্শনের প্রয়োজন বেশি। তবে কিছু তো বিক্রি হচ্ছে। অলিগলি কিংবা যে কোনো দোকানে আমাদের পণ্য পাওয়া যায়।
বেসরকারি উদ্যোগে দেশের গাড়ি প্রস্তুত করে বৃহত্তম শিল্প-প্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্যামিলির সহযোগী প্রতিষ্ঠান পিএইচপি অটোমোবাইল লিমিটেড ও পিএইপি মোটরস লিমিটেড। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠান দুটি তৈরিকৃত সেডান কার ও মোটরসাইকেল বাজারে নিয়ে এসেছে। প্রদর্শনীর জন্য মেলায় স্টল নিয়েছে তারা। এ মেলা উপলক্ষে প্রেটন প্রেভের মূল্য ২৫ লাখ টাকা, প্রেটন সাগা ১৮ লাখ, মাল্টিক্স সাড়ে সাত লাখ, পিএইচপি প্রাইড ১২৫ সিসি প্লাস এক লাখ ৩০ হাজার, পিএইচপি মারকাবা ১৫০ সিসি এক লাখ ৪০ ও পিএইচপি সুপার ১০০ সিসি ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা রাখছে তারা। কারের ক্ষেত্রে তিন বছর ওয়ারেন্টি ও পাঁচবার সার্ভিস সুবিধা পাওয়া যাবে। এছাড়া বাইকের ক্ষেত্রে নিবন্ধন ফি সুবিধাও পাওয়া যাবে।
আয়োজকদের মতে, মেলা শুধু বেচাকেনার জন্য নয়, দেশীয় পণ্যের প্রদর্শন ও আন্তর্জাতিকভাবে দেশীয় পণ্যের পরিচিত অর্জনের জন্য। মেলার মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে একটি বন্ধন গড়ে ওঠে, যা বাজার সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম চেম্বারের এ উদ্যোগী ভূমিকা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এবারের মেলা চার লাখ বর্গফুটের অধিক জায়গাজুড়ে বসেছে। এবার ১৭ প্রিমিয়ার গোল্ড প্যাভিলিয়ন, চার মিনি মেগা প্যাভিলিয়ন, ১১ প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, আট স্ট্যান্ডার্ড প্যাভিলিয়ন, ১৭২ প্রিমিয়ার মেগা স্টল, ২৩ মেগা স্টল, ১৪ প্রিমিয়ার গোল্ড স্টল, ১৩ প্রিমিয়ার স্টল, ১৪ স্ট্যান্ডার্ড স্টল, তিন রেস্টুরেন্ট, পার্টনার কান্ট্রি থাই জোন ও তিনটি আলাদা জোন নিয়ে মোট ৪৫০টির মতো প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিচ্ছে। এছাড়া ভারত, ইরান, মরিশাস ২৩ হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে বিভিন্ন স্টলের মাধ্যমে তাদের পণ্য বিক্রি করবে। তবে পার্টনার কান্ট্রি হিসেবে থাকছে থাইল্যান্ড। এসব প্রতিষ্ঠান ক্রেতা সাধারণের জন্য আকর্ষণীয় মূল্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা সুযোগ রয়েছে।
মেলা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছৈয়দ জামাল আহমদ বলেন, প্রতিবারের মতো মেলায় বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সবসময় নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের জন্য মেলা চলাকালীন সময় পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি মেলায় লেনদেনের জন্য ব্যাংক বুথও স্থাপন করা হয়েছে।
মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। দর্শনার্থীদের জন্য টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা।