প্রতিনিধি, কক্সবাজার: অন্যদিনের তুলনায় ছুটির দিন শুক্রবার পর্যটকে মুখরিত ছিল সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। নারী পর্যটক সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষিত হওয়ার ঘটনার পর কক্সবাজার পর্যটনশিল্প বেশ কিছুদিন মুখ থুবড়ে পড়ে ছিল। অনেক দিন পর সেখানে প্রাণ ফিরেছে। আতঙ্ক কাটিয়ে কক্সবাজারে আবার বেড়াতে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে নেমেছে পর্যটকের ঢল। ছুটির দিনে দেশি-বিদেশি পর্যটকের পদভারে আবারও মুখরিত হয়ে উঠেছে সৈকত। শুধু সৈকত নয়, আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যটকরা আতঙ্ক কাটিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন। এখানকার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস কোথাও কোনো কক্ষ এখন ফাঁকা নেই।
বড় ভাইয়ের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আতিয়া ওয়াসিমা আতিকা। তিনি বলেন, কক্সবাজারে নিরাপত্তা
নিয়ে আশঙ্কা হয়েছিল। কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখেছি কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আলাদা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, যেজন্য বিদেশি পর্যটকরা নির্ভয়ে ঘোরাফেরা করছে। তাই সুযোগ পেয়ে সমুদ্রের কাছে ছুটে এসেছি।
ঢাকা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত শাহীন আলম। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে অনেকটা মুগ্ধতার আবেশে তিনি বলেন, কক্সবাজার আমার কাছে অনন্যসাধারণ একটি জায়গা। এখানে না এলে সমুদ্রের মোহনীয় রূপ কেউ বুঝতে পারবে না। সবার কাছে আমি আহ্বান জানাব, অন্তত একবার হলেও কক্সবাজার থেকে ঘুরে যান।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে সপরিবারে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন সোহেল রহমান। তিনি বলেন, ‘সারাবছরই কাজে ডুবে থাকি। ছুটি পাই না। ডিসেম্বর মাসে একটা ছুটি পাই, সেই সুযোগটা মিস করতে চাইনি, তাই এখানে ছুটে আসা। অসাধারণ সময় কাটছে। আর এখানকার পরিবেশ তো অসাধারণ, নিরাপত্তাব্যবস্থাও ভালো। সব মিলিয়ে আশা করছি খুব ভালো ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরব।’
এদিকে পর্যটকের আগমনে ব্যস্ত সময় পার করছেন সৈকতের ফটোগ্রাফার, ঘোড়াওয়ালা, জেডস্কি ও বাইকচালকরা। পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হোটেল-মোটেলগুলো। এখানকার প্রায় ৩৫০টি হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসের কোনোটিতেই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্ষ ফাঁকা নেই বলে জানিয়েছে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতি।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি পয়েন্ট, পর্যটন স্পট ও বালিয়াড়িতে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। ফলে আগত পর্যটকরা নিরাপদে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। সুতরাং যেখানেই পর্যটকরা হয়রানির শিকার হবেন, সেখানে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে সমন্বয় করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।