তাজিজুল ইসলাম: মহামারিকালে এবারও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে শুরু হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী এ প্রাণের মেলার পর্দা ওঠে। তবে শুরুর প্রথম তিন দিন ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি তেমন একটা চোখে না পড়লেও চতুর্থ দিনে জমে উঠে বইমেলা। গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় দুপুর গড়ানোর আগেই বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মেলা প্রাঙ্গণে লেখক, প্রকাশক, পাঠক ও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।
সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার বেলা ১১টায় উš§ুক্ত করা হয় মেলা প্রাঙ্গণ। সকাল থেকেই ধীরে ধীরে বইমেলা ঘিরে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুপুর গড়াতেই সাধারণ ক্রেতা-দর্শনার্থীরা বইয়ের দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেককে তাড়াহুড়ো করে পছন্দের বই কিনে ফিরে যেতেও দেখা যায়।
বিকাল তিনটার দিকে দেখা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ২নং ফটকের প্রবেশ মুখে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সারি। মেলায় আসা প্রত্যেকের মাস্ক পরা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিশ্চিত করেই ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সুরক্ষা কর্মীরা।
বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা যায়, মেলায় সর্বসাধারণের উপস্থিতি বাড়লেও সে তুলনায় বেচাকেনা বাড়েনি। অনেকেই স্টলগুলোতে গিয়ে বিভিন্ন লেখকের বই দেখে দু-চার পৃষ্ঠা উল্টে-পাল্টে বেরিয়ে আসছেন। কেউ কেউ দু-একটা বই কিনে নিচ্ছেন। আবার অনেকের পছন্দের লেখকের বই এখনো মেলায় আসেনি। তারা অন্য লেখকের বই দেখছেন। পরে হয়তো পছন্দের বইগুলো সংগ্রহ করবেন।
বিক্রয়কর্মীদের ভাষ্য, সাপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বাড়লেও সে তুলনায় বেচাকেনা বাড়েনি। তাদের প্রত্যাশা-দিন যত গড়াবে বাড়তে থাকবে ক্রেতার সংখ্যা। বাড়বে বই বিক্রিও। তবে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, তরুণ-তরুণীদের অনেকে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। তাদের অনেকেই প্রায় প্রতিদিনই মেলায় এলেও কিছু বই কেনেন মেলার শেষ দিকে।
ছুটির দিন হওয়ায় অধিকাংশরাই বইমেলায় এসেছেন সপরিবারে। এছাড়া বিভিন্ন স্টলে উপস্থিত ছিলেন লেখকরা। এতে করে পাঠক-লেখকের মিলনমেলায় পরিণত হয় মেলা প্রাঙ্গণ। অনেককেই দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নিতে দেখা গেছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে শুক্রবারের ‘শিশু প্রহর’ ছিল আকর্ষণের কারণ। মেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত ছিল কচিকাঁচাদের হৈ-হুল্লোড়ে। ছোট্ট সোনামণিরা বাবা-মায়ের হাত ধরে ঘুরতে এসেছে বইমেলায়। শহরের যান্ত্রিকতাকে একপাশে ঠেলে রেখে শিশু-কিশোরেরা মজে অনাবিল আনন্দে। বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে তারা সংগ্রহ করেছে নিজেদের পছন্দের বইগুলো। সাকিব নামের আট বছরের এক শিশুর অনুভূতি জানতে চাইলে সে বলে, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে এখানে ঘুরতে এসেছি, খুব ভালো লাগছে। আমার পছন্দের কিছু কমিকস্ বইও কিনেছি। পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু অদ্রিতা বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছে ছড়ার বই কিনতে।’
এ ছাড়া শুক্রবারের বাড়তি চাপের কথা মাথায় রেখে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের পক্ষ থেকে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সদস্য। তবে কভিডকালীন এ সময়ে প্রবেশকালে সবাই মাস্ক পরিধান করলেও ভেতরে ছিল অনেকটা ভিন্ন চিত্র। অনেকেরই মুখে ছিল না মাস্ক, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানা হয়নি সামাজিক দূরত্ব; উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি। এ বিষয়ে কারও কারও মতামত নিতে গেলে উপস্থাপন করেন বিভিন্ন অজুহাত।