গতকালের পর
কম বয়সে হঠাৎ বাড়তি রক্তচাপ পাওয়া গেলে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এর পেছনে কোনো অন্তর্নিহিত রোগ আছে কি না, খতিয়ে দেখা উচিত। যেমন জন্মগতভাবে শরীরের প্রধান রক্তনালিতে সংকোচন বা কোনো সমস্যা যেমন কোয়ারকটেশন অব অ্যাওর্টা, তাকায়াসু আর্টারাইটিস ইত্যাদি আছে কি না। বংশগত কিডনি রোগ, কিডনির প্রদাহ, ত্রুটিপূর্ণ কিডনি, কিডনির রক্তনালির সমস্যা (রেনাল আর্টারি স্টেনোসিস) বা কিডনির টিউমার হলে রক্তচাপ যেকোনো বয়সেই অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে। হরমোনজনিত সমস্যা (যেমন থাইরয়েড, অ্যাড্রিনাল বা পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যা), মস্তিষ্কের টিউমার বা জন্মগত ত্রুটি, লুপাস, রক্তনালির প্রদাহ (ভাসকুলাইটিস) ইত্যাদি। দীর্ঘদিন স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবন করলে রক্তচাপ বাড়তি থাকতে পারে।
যেহেতু উচ্চ রক্তচাপের তেমন কোনো উপসর্গ নেই, আর অল্প বয়সে কেউ নিয়মিত রক্তচাপ মাপে না, তাই প্রায়ই কম বয়সীদের এই সমস্যা থাকার পরও ধরা পড়ে না। ধরা পড়ে হার্ট ফেইলিউর, স্ট্রোক বা কিডনি সমস্যার মতো জটিলতার। ছোটদের ক্ষেত্রে কিডনির প্রদাহ উচ্চ রক্তচাপের প্রধানতম কারণ। শিশুদের লালচে প্রস্রাব, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, শরীরে পানি আসা এই সমস্যার লক্ষণ। আবার থাইরয়েডের সমস্যা কিশোরী ও তরুণীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। হঠাৎ মুটিয়ে যাওয়া, মাসিকের সমস্যা, গর্ভপাত ইত্যাদি হলে অল্প বয়সে থাইরয়েডের সমস্যার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক আছে কি না পরীক্ষা করে দেখা দরকার। যথাসময়ে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অতিরিক্ত রক্তচাপের প্রভাবে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর অপরিবর্তনীয় ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণ করুন।
১. পাতে আলগা লবণ খাবেন না; ২. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন; ৩. শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খান; ৪. নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা হাঁটাহাঁটি করুন; ৫. নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করুন; ৬. রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করুন; ৭. তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন; ৮. চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ পরিবর্তন বা সেবন বন্ধ করবেন না; ৯. স্ট্রেস এড়িয়ে প্রফুল্ল থাকুন; ১০. রোজ ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুমান। (শেষ)
অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান
হƒদরোগ বিভাগ, বিএসএমএমইউ
সভাপতি, বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন