Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 1:53 pm

ছোট যমুনা নদী থেকে বালি উত্তোলন বদলগাছীতে ভাঙনঝুঁকিতে ফসলি জমি

প্রতিনিধি, নওগাঁ: নওগাঁর বদলগাছীতে ছোট যমুনা নদী থেকে বালি উত্তোলন করায় ঝুঁকিতে পড়েছে ফসলি জমি। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় এলাকাবাসী বালি উত্তোলনের সরঞ্জাম ভাংচুর করেছে। উপজেলার পারসোমবাড়ী বাজার এলাকায় ভাংচুরের এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে সেখানে বালু উত্তোলন বন্ধ আছে। তবে দৌলতপুর গ্রামে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলার পারসোমবাড়ী বাজারে সেতুর পশ্চিম পাশে এবং দৌলতপুর গ্রামে ছোট যমুনা নদীতে থেকে মেসার্স তরফদার ট্রেডার্স ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। এ দুটি স্থানে প্রায় ২৫-৩০ ফুট গভীর করা হয়েছে। পারসোমবাড়ী বাজার এলাকায় ফসলি জমি ঘেঁষে ১৫-২০ ফুট গভীর করে স্ক্যাভেটর মেশিন দিয়ে বালি তোলা হয়েছে। এতে আগামী বন্যায় এসব জমি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জমির কাছ থেকে বালি উত্তোলন না করার জন্য বারবার কর্তৃপক্ষকে নিষেধ করা হলেও জোরপূর্বক বালি উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন জমির মালিকরা। বালু উত্তোলনকারীরা কৃষকদের মামলা হামলার ভয় দেখাচ্ছেন। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে জমি রক্ষায় কৃষকরা জোটবদ্ধ হয়ে পারসোমবাড়ীতে বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম পাইব, নলকূপ ও টিনের বেড়া ভাংচুর করেছেন। তবে দৌলতপুর গ্রামে বালি উত্তোলন চলমান আছে। এসব বালি পরিবহনের জন্য বাঁধের রাস্তা কাটা হয়েছে। ট্রাক্টরে অতিরিক্ত বালি বহন করা বাঁধের রাস্তা ও পাকা রাস্তা নষ্ট হচ্ছে।
উপজেলার চকগোপাল গ্রামের ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ জানান, পারসোমবাড়ীতে সেতুর পাশে যেখান থেকে বালি তোলা হয়েছে সরকার সেখানে তাকে ৯৯ বছরের জন্য ওই ৩৪ শতক জমি লিজ দিয়েছে। সেখানে সরকার বাড়ি তৈরি করে দেবে। ইতোমধ্যে ওই জায়গাটি জরিপও করা হয়েছে। অথচ প্রভাবশালীরা সেখান থেকে বালু উত্তোলন করছে।
কৃষক গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল জানান, তাদের সামান্য জমি। জমিতে ফসল করে সারা বছর ভরণ-পোষণ চলে। এখন ফসলি জমির পাশ থেকে যদি এভাবে বালি তোলা হয়, তাহলে আগামী বছর নদীতে পানি আসলে জমি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
দৌলতপুর গ্রামের কৃষক আবদুর রাজ্জাক জানান, নদীর উপরে ৫৮ শতক ফসলি জমিতে সবজি লাগানো আছে। গত দুই মাস ধরে নদীতে ২০-২৫ ফুট গভীর করে জোরপূর্বক বালি উত্তোলন করছেন মাখন, শেখর, মাসুদ, নাসির ও বাচ্চুসহ কয়েকজন প্রভাবশালী। বারবার তাদের নিষেধ করা হয়েছে। উল্টো তারা মামলা করার ভয় দেখায়। প্রশাসনকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
কটকবাড়ী গ্রামের আসিক হোসেন জানান, বাঁধের রাস্তা কেটে ট্রাক্টর চলাচলের জন্য রাস্তা করা হয়েছে। ট্রাক্টরে করে অতিরিক্ত বালি বহন করায় বাঁধের রাস্তার বেহাল হয়ে যাচ্ছে।
তাজপুর গ্রামের শরিফ উদ্দিন জানান, গত ৪০ বছর দৌলতপুর গ্রামের এ ছোট যমুনা নদী ছিল না। প্রতি বছর বন্যার কারণে ফসলি জমি ভাঙতে ভাঙতে এ নদী হয়ে গেছে। ফসলি জমিগুলো এখন নদী। আর এ নদী থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে।
বালি উত্তোলনকারী শহিদুল ইসলাম ও শেখর জানান, তারা এক বছরের জন্য মেসার্স তরফদার ট্রেডার্সের কাছ থেকে পারসোমবাড়ী ও দৌলতপুর বালিমহাল সাবলিজ নিয়েছেন। এখানে বৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। কারও কোনো ফসলি জমির ক্ষতি হবে না। এছাড়া কাউকে মামলা করার হুমকিও দেওয়া হয়নি। বরং এলাকাবাসী তাদের বালি উত্তোলনের সংরঞ্জাম ভাংচুর করেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুম আলী বেগ জানান, পারসোমবাড়ী এলাকায় বালি উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে ওই স্থানে বালি উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু লিজ প্রক্রিয়ায় তারা বালু উত্তোলন করছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আগ পর্যন্ত ওই স্থানে বালি উত্তোলন আপাতত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।