মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশি পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি দেখা যায়। তাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার নিচে হতে পারবে না। কিন্তু আগে তালিকাভুক্ত কিছু কোম্পানি এখনও নামমাত্র মূলধন নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাজারে এমন ১১টি কোম্পানি রয়েছে যারা সাত কোটি টাকার কম পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে এসব কোম্পানির মূলধন বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। তবে কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকার কম থাকতে পারবে নাÑঅচিরেই এমন নিয়ম করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ব্যবসা করছে মুক্ত জুটেক্স। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৪০ লাখ টাকা। এছাড়া এক কোটি ২৫ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা করছে লিবরা ইনফিউশন। অন্য কোম্পানি বঙ্গজের পরিশোধিত মূলধন মাত্র এক কোটি ৩১ লাখ টাকা। তালিকাভুক্ত আরও আটটি কোম্পানি সাত কোটি টাকার কম পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এ কোম্পানিগুলো হচ্ছে আজিজ পাইপস, রেকিট বেনকিজার, জুট স্পিনার্স, জিলবাংলা সুগার, শ্যামপুর সুগার, ন্যাশনাল টি, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও রেনউইক যজ্ঞেশ্বর।
এসব কোম্পানির মধ্যে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে আজিজ পাইপস, বঙ্গজ, জুট স্পিনার্স, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, জিলবাংলা সুগার ও শ্যামপুর সুগার। বাকি কোম্পানিগুলো ‘এ’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। নিয়ম অনুযায়ী ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর সুযোগ নেই। অন্যদিকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকা কোম্পানিগুলো নিজেদের অনীহার কারণে পরিশোধিত মূলধন বাড়াচ্ছে না। এসব কোম্পানির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, তারা বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমেও পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ নেই কোম্পানিগুলোর। এসব কোম্পানির নামে অভিয়োগ রয়েছে নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য এ নীতি অবলম্বন করছেন। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ কোম্পানির পরিচালকদের কাছে রয়েছে সিংহভাগ শেয়ার। রাইট কিংবা বোনাস শেয়ারের মাধ্যমে মূলধন বাড়লে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে শেযারসংখ্যা বাড়বে। ফলে লভ্যাংশও বাইরে চলে যাবে। যে কারণে কোম্পানি মূলধন বাড়ানোর ক্ষেত্রে নীরব থাকার নীতিতে অটল রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় বঙ্গজের কোম্পানি সচিব ফিরোজ হোসেনের সঙ্গে। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, পুঁজিবাজারে আসতে হলে সর্বনি¤œ পরিশোধিত মূলধন কত হবে বর্তমানে সে নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন যারা বাজারে আসছে তারা নিয়ম মেনেই আসছে। যারা আগে তালিকাভুক্ত রয়েছে তাদের জন্য এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়। ফলে এখানে কোনো অসুবিধা থাকার কথা নয়। তিনি বলেন, আমরা বহুদিন থেকেই পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি। এজন্য আমরা রাইট শেয়ার ইস্যু চেয়ে বিএসইসির কাছে আবেদনও করেছিলাম। অনুমোদন না পাওয়ায় আমাদের পক্ষে রাইট ইস্যু করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে পরিশোধিত মূলধনও আপাতত বাড়াতে পারছি না।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের পরিশোধিত মূলধন দুই কোটি টাকা। একইভাবে জেমিনি সি ফুডের পরিশোধিত মূলধন এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আর ন্যাশনাল টির বর্তমান পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ছয় কোটি ৬০ লাখ টাকা। এছাড়া শ্যামপুর সুগারের পাঁচ কোটি টাকা, জিলবাংলার ছয় কোটি টাকা, রেকিট বেনকিজারের চার কোটির ৭২ লাখ টাকা, আজিজ পাইপসের চার কোটি ৮৫ লাখ টাকা ও জুটস্পিনার্সের পরিশোধিত মূলধন রয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে তাই এদের শেয়ারহোল্ডারদের কথাও ভাবা উচিত। তারা যদি রাইট বা বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মাঝেমধ্যে মূলধন বৃদ্ধি করে তাহলে সেখানে শেয়ারহোল্ডারদের পাশাপাশি নিজেরাও লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, কোম্পানিগুলো যাতে একটি শক্তিশালী ভিত্তি থাকে সেজন্য পুঁজিবাজারে আসার জন্য কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে যে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত কিন্তু পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকার কম তাদের বিষয়টিও আমাদের আলোচনায় রয়েছে। কোম্পানি সচিব এবং বিএসইসির সঙ্গে কথা বলে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। কোনো কোম্পানিরই পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকার কম থাকবে না। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, স্বল্প মূলধনের কোম্পানি নিয়ে মার্কেট তৈরি হচ্ছে। তবে এখন যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে তাদের লেনদেন সেখানে হবে কি না, সেটা বলা যাচ্ছে না।
Add Comment