নিজস্ব প্রতিবেদক: দুই দফা বন্যায় গত বছর দেশে চালের উৎপাদন বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এতে চালের উৎপাদন কমেছে ১৯ লাখ মেট্রিক টন। এর প্রভাবে দেশের প্রধান খাদ্যশস্যটির উৎপাদন ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির সম্প্রতি প্রকাশিত ‘কমোডিটি মার্কেট আউটলুক: এপ্রিল ২০১৮’-তে এ তথ্য উঠে এসেছে।
যদিও উৎপাদনের ঘাটতি মেটাতে চাল আমদানিতে শুল্ক তুলে দিয়েছে সরকার। বাড়তি আরও কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক জানাচ্ছে, এর প্রভাবে চালের আমদানি বেড়ে গেছে ৩৬ গুণ। তবে আমদানির উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব চালের বাজারে দেখা যায়নি। এতে প্রায় এক বছর ধরেই অস্থির রয়েছে দেশের চালের বাজার।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৪৫ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২০১৫ সালে চালের উৎপাদনে শূন্য প্রবৃদ্ধি হয়। পরের বছর তা সামান্য বেড়ে হয় তিন কোটি ৪৬ লাখ মেট্রিক টন। তবে দুই দফা বন্যার প্রভাবে গত
বছর চালের উৎপাদন দাঁড়ায় তিন কোটি ২৭ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ উৎপাদন কমেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাংশ।
এর আগে ২০১০ সালে দেশে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ১৭ লাখ মেট্রিক টন। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় তিন কোটি ৩৮ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়া ২০১২ সালে চালের উৎপাদন হয় তিন কোটি ৪৪ লাখ মেট্রিক টন। এ হিসেবে চলতি বছর চালের উৎপাদন ছয় বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে গেছে।
প্রতিবেদনে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের চালের উৎপাদন বৃদ্ধির তথ্য রয়েছে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৭০-৭১ সালে দেশে চালের উৎপাদন ছিল এক কোটি ১১ লাখ মেট্রিক টন। পরের দশ বছরে দেশে চালের উৎপাদন বেড়েছে ২৮ লাখ মেট্রিক টন। ফলে সে বছর ১৯৮০-৮১-তে দেশে চাল উৎপাদিত হয় এক কোটি ৩৯ লাখ মেট্রিক টন। একইভাবে পরবর্তী দশকগুলোয় চালের উৎপাদন বেড়েছে যথাক্রমে ৪০ লাখ, ৭২ লাখ ও ৬৬ লাখ মেট্রিক টন। এতে ২০১০-১১-তে উৎপাদন এসে দাঁড়ায় তিন কোটি ১৭ লাখ মেট্রিক টনে।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেবেও গত অর্থবছর দেশে ধানের উৎপাদন কমেছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে মোট চাল উৎপাদিত হয়েছিল ৩৪৭ দশমিক শূন্য ৯ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এর পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩৮ দশমিক শূন্য দুই লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এক বছরে উৎপাদন কমেছে প্রায় ৯ লাখ মেট্রিক টন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, গত বছর কয়েক মাসের ব্যবধানে দুটি বন্যার প্রভাব পড়ে চালের বাজারে। যদিও বন্যা বেশি দিন স্থায়ী না হওয়ায় চালের ক্ষতি হয়েছে তুলনামূলক কম। তবে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারের মজুদ কমে যাওয়া। আর এ সুযোগটি নেন ব্যবসায়ীরা। ফলে আমদানি দ্রুত বাড়লেও চালের দামে প্রভাব পড়েনি।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বন্যায় ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকলে সরকার আমদানি শুল্ক কমানোসহ নানামুখী উদ্যোগ নেয়। জরুরি ভিত্তিতে আমদানি
করা হয় প্রায় ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য। পরে এ আমদানি আরও বাড়ে। এতে গত বছর চালের আমদানি দাঁড়ায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন। অথচ তার আগের বছর চালের আমদানি ছিল মাত্র এক লাখ মেট্রিক টন। এ হিসেবে এক বছরে
চালের আমদানি বেড়ে গেছে ৩৬ গুণ। এর আগে ২০১০ সালে সর্বোচ্চ ১৩ লাখ টন চাল আমদানি করা হয়েছিল।
যদিও আমদানি বৃদ্ধির প্রভাব চালের দামে সেই অনুপাতে প্রভাব পড়েনি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, চালের দাম ৫০ টাকার ওপরে উঠে যাওয়ায় কিছু লোকের অসুবিধা হয়েছে, তাদের যা কিছু সঞ্চয় ছিল তা হয়তো খরচ হয়েছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের উঠানে উঠছে বোরো ধান। আগামী সপ্তাহেই নতুন চাল উঠবে বাজারে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে চালের দাম হ্রাস পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। বরং অসময়ে চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে দেখা যাচ্ছে চালের দামে ঊর্ধ্বগতি। সব ধরনের চালেই গত মাসের চেয়ে বস্তাপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে বলে ভোক্তারা অভিযোগ করেছেন।