হামিদুর রহমান : মোবাইল ফোন ও বাসায় ব্যবহারকারী ডেস্কটপ কম্পিউটারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাইবার ক্যাফেতে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণকারী গ্রাহকের সংখ্যা কমে গেছে বিপুল হারে। পাশাপাশি ইন্টারনেটের মূল্য কমায় গ্রাহক এখন নিজেদের কাজ নিজেরাই করছেন। ইন্টারনেট সেবায় জটিল কোনো কাজ ছাড়া সাইবার ক্যাফের শরণাপন্ন হচ্ছেন না গ্রাহক। ফলে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সাইবার ক্যাফে। ছয় বছরে বন্ধ হয়েছে এক হাজার ১০০ ক্যাফে।
সাইবার ক্যাফে ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০১০ সালে সারা দেশে সাইবার ক্যাফের সংখ্যা ছিল প্রায় দুই হাজার ১০০টি। বর্তমানে সারা দেশে ছোট-বড় মিলে সাইবার ক্যাফে আছে এক হাজারটির মতো। এর মধ্যে ৩০০টি রয়েছে ঢাকায়; বাকি ৭০০টি রয়েছে ঢাকার বাইরে অন্যান্য শহরে।
সাইবার ক্যাফে ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি এসএম জুলফিকার হায়দার শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমানে ক্যাফেগুলোয় আগের মতো গ্রাহক নেই; তাই ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়। ফলে অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এখন আর নতুন করে ক্যাফে বন্ধ হচ্ছে না; যেগুলো এখনও টিকে আছে, সেগুলো থাকবে। সামনে এ ব্যবসা কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায়, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ ব্যবসায় নতুন কাজ যোগ করতে আলোচনা চলছে; আশা করছি সামনে ভালো কিছু হবে।
২০০৬ সালে সাবমেরিন কেব্ল্ যুক্ত হওয়ার পর সাইবার ক্যাফে ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকে। সাবমেরিন কেব্ল্ প্রথমদিকে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা হলেও পরে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাফে মালিকরা দোকান টিকিয়ে রাখতে ব্যবসায় যোগ করছেন ভিন্নতা। অনেক দোকানে বিক্রি হচ্ছে বই-খাতা, ডিভিডি, ফ্লেক্সিলোডসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা হাতের মুঠোয় চলে আসায় এখন আর সাইবার ক্যাফেতে যাওয়া হয় না। আগে ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারণা কম ছিল, সে জন্য ক্যাফেতে যাওয়া হতো। এখন মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়; ফলে খুব জটিল কোনো কাজ ছাড়া ক্যাফেতে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া সাইবার ক্যাফেতে চার্জও অনেক বেশি। এখন মোবাইল ফোন অপারেটরে বিভিন্ন ইন্টারনেট প্যাকেজ ও অফার পাওয়া যায়। যার ফলে মোবাইল ফোন ও বাসায় ব্যবহারকারী ডেস্কটপ কম্পিউটারে নিজেদের কাজ নিজেরাই করছেন বলে জানান গ্রাহকরা।
কয়েক বছর আগেও সাইবার ক্যাফেতে ছাত্রদের যাওয়া-আসা ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন হাতে হাতে ফোন আসায় ক্যাফেতে যাওয়া কমে গেছে।
রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জুবায়ের আহম্মেদ
শুভ জানান, হাইস্কুলে পড়ার সময় সপ্তাহে দুই-তিন দিন যাওয়া হতো সাইবার ক্যাফেতে। কলেজে পড়ার সময়ও মাঝেমধ্যে যাওয়া হতো। তখন ঘণ্টাপ্রতি চার্জ ছিল ২০ টাকা। এখন ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা বেড়েছে, মোবাইল ফোনে কম টাকায় ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছি, যার কারণে এখন আর ক্যাফেতে যাওয়া হয় না।
মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে কম দামের স্মার্টফোন ও হাইস্পিড ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্যাকেজসহ একাধিক অফার থাকায় বাজার হারিয়েছে সাইবার ক্যাফে ব্যবসা।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসির তথ্যমতে, বর্তমানে মোবাইল ফোনের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৬৪ লাখ। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
সংস্থার হিসাবমতে, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা ছিল তিন কোটি ছয় লাখের মতো। ২০১৪ সালে এসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় চার কোটি ৩৬ লাখ। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আরও বেড়ে হয় প্রায় পাঁচ কোটি ৪১ লাখ এবং ২০১৬ সালে ছয় কোটি ৬৬ লাখ। এর বেশিরভাগই মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
শান্তিনগরের ফেয়ার কম্পিউটার অ্যান্ড সাইবার ক্যাফের মালিক আবুল খায়ের স্বপন জানান, ‘মূলত সাইবার ক্যাফের গ্রাহক কমে গেছেন। এখন ছবি থেকে ছবি করা ও স্ক্যানারের কাস্টমার বেশি। এক সময় ক্যাফেতে গ্রাহকের চাপে জায়গা হতো না। এখন আর সে ব্যবসা নেই। মাঝে মাঝে দোকান ভাড়া তুলতেও কষ্ট হয়। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই। তবে সামনে নতুন কিছু কাজ আসতে পারে।’
Add Comment