ইসমাইল আলী: তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু (শাহ আমানত সেতু) উদ্বোধন করা হয় ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে ছয় বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে পুরোনো সেতুর সংযোগ সড়কটি। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চট্টগ্রামবাসীর। এ অবস্থায় শুরু হতে যাচ্ছে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ। চীন, বাংলাদেশ ও কুয়েতের তিনটি কোম্পানি যৌথভাবে এ সড়ক নির্মাণ করবে।
এদিকে বাস্তবায়ন বিলম্বে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে একাধিকবার। প্রকল্প সহায়তার আংশিক অর্থ ফেরতও নিয়েছে কুয়েত সরকার। এখন কুয়েতের সঙ্গে সরকারি তহবিল মিলিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর কাজ শুরু হয়। নির্মাণ শেষে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে তা উদ্বোধন করা হয়। ৯৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৫১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার ২৯১ কোটি ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। বাকি প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা আসে কুয়েত ফান্ড থেকে। সেতু নির্মাণের পর কুয়েত ফান্ডের ২২০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকে।
সে সময় ওই টাকায় সেতুর ওপারে চার লেনের ১২ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দাতা সংস্থাটি ওই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। আবার কর্ণফুলী সেতু থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত আট কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে ১৫৪ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। পরে এ প্রস্তাবে সম্মত হয় কুয়েত ফান্ড। ২০১২ সালের ১৩ জুন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর ও কর্ণফুলী সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে লিখিত চুক্তি স্বাক্ষর করে। কিন্তু তার পরও সংযোগ সড়ক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি।
অবশেষে ২০১৫ সালে আট কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। চারটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সংযোগ সড়কের বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করে। এর ভিত্তিতে গত বছর সংযোগ সড়ক নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়। যৌথভাবে এর কাজ পাচ্ছে চীনের ইউহান মিউনিসিপাল কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (ডব্লিউএমসিজি), বাংলাদেশের মীর আক্তার কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও কুয়েতের সাদিম আল কুয়েত। প্রতিষ্ঠান তিনটি ২৭০ কোটি ১১ লাখ টাকা প্রস্তাব করে।
সূত্র জানায়, ৫ মার্চের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তিনটির সঙ্গে চুক্তি সই করা হবে। এর আগে চুক্তি মূল্যের ১০ শতাংশ সিকিউরিটি মানি (নিরাপত্তা জামানত) হিসেবে জমা দেওয়ার নির্দেশনা জারি করেছে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক আবু হেনা মোহাম্মদ তারেক ইকবাল শেয়ার বিজকে বলেন, সংযোগ সড়ক নির্মাণে প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণে মামলাজনিত জটিলতা ছিল। পাশাপাশি পুরোনো প্রকল্প বাদ দিয়ে নতুন আরেকটি প্রস্তাবনা নেওয়ায় সময়ক্ষেপণ হয়েছে। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণ চূড়ান্ত হয়েছে। চুক্তির পর আগামী মাসে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। ২০১৯ সালের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণ শেষ হবে।
এদিকে কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সেতু ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আর তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ হলেও সড়ক সংযোগ না থাকায় তার পুরোপুরি সুফল পায়নি চট্টগ্রামবাসী। দ্বিতীয় সেতুর সংযোগ সড়কই এখন ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সেতু এলাকায় প্রতিদিন দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে নদীর অপর পাড়ে শিল্প-কারখানায় উৎপাদিত পণ্য পরিবহনেও ভোগান্তি লেগেই রয়েছে। আর পুরোনো সড়কটির অবস্থাও খুবই খারাপ। কার্পেটিং উঠে গেছে, খানাখন্দে ভরা।
প্রসঙ্গত, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নিশ্চিত করা। ২০০৩ সালে সওজের অধীন এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪২৯ কোটি সাত লাখ টাকা। দুই দফা বেড়ে ২০১৩ সালে ব্যয় দাঁড়ায় ৬৫১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বাস্তবায়ন বিলম্বে তৃতীয় দফায় ব্যয় আরও ৩১ কোটি ৫১ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ৬৮২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।