ছয় মাসে মূলধন ঘাটতি বেড়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা

মেহেদী হাসান: ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মূলধন ঘাটতিও। গত ছয় মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ছয় ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি বেড়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। হলমার্কসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারির ঘটনায় আলোচিত দেশের অন্যতম বৃহৎ সোনালী ব্যাংকেই ঘাটতি বেড়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সাত হাজার ৯৩০ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, খেলাপি ঋণের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে মূলধন ঘাটতি। ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি তিন হাজার ৬১৪ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি বেড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সোনালী ব্যাংকে। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতির পরিমাণ ছিল তিন হাজার ১৪০ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ছয় হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। ঋণ প্রদানের নামে অর্থ লুট হওয়া বেসিক ব্যাংকে ঘাটতি বেড়েছে ৫৮৩ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ছিল দুই হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ১০৬ কোটি টাকা। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে; যার পরিমাণ সাত হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ছিল সাত হাজার ৫৪০ কোটি টাকা; বেড়েছে ৩৯০ কোটি টাকা। ছয় মাসে জনতা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৭২ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৮৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭৮ কোটি টাকা। এছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ৭০ কোটি টাকা।
আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আর খেলাপি বাড়লে মান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে হয়। সে কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। আর বাস্তবতা হলো, এভাবে একদিকে জনগণের জমানো টাকা ব্যাংক থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে একশ্রেণির মাফিয়ার হাতে, যা আদায় করা যাচ্ছে না। বিপরীতে রাষ্ট্রের তহবিল থেকে টাকা নিয়ে মূলধন ঘাটতি মেটাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সরকারি ব্যাংকগুলো। এ টাকাও জনগণের ট্যাক্সের টাকা। অথচ জড়িতদের কারও কিছুই হচ্ছে না। মাঝখানে কৌশলে জনগণের পকেট কাটা হচ্ছে।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, মূলধন ঘাটতি কমাতে হলে ব্যাংকগুলোকে ঋণ আদায় প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে। তা না হলে সরকারি তহবিল থেকেই বারবার এসব ব্যাংকের ঘাটতি মেটাতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য গত ছয় বছরেই সরকার ১৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরেও ব্যাংকগুলোকে দেওয়ার জন্য দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তবে নতুন প্রস্তাবিত বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের তহবিল নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।
এদিকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আট লাখ ২২ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। সে হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০