Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 3:10 pm

ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রস্তাব নাকচ: বন্ড ছাড়লে সরকার সহায়তা করতে পারে: অর্থমন্ত্রী

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নেগেটিভ ইকুইটির (ঋণাত্মক মূলধন) বিপরীতে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ সুদে ছয় হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি বলেন, টাকা দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে বন্ড ছাড়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো আর্থিক সহায়তায় বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নিলে সেখানে সরকার সহায়তা করতে পারে।

এ সময় বন্ড ছেড়ে তহবিল সংগ্রহের বিষয়ে ডিবিএ’র কাছে প্রস্তাবনা চেয়ে মুহিত বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সদস্যদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)-এর নব-নির্বাচিত কমিটির সঙ্গে বৈঠককালে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ডিবিএ সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোশতাক আহমেদ সাদেক, সহ-সভাপতি খুজিস্তা নূর-ই নাহরীন, পরিচালক আবদুল হকসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে ডিবিএ নেতারা জানান, বর্তমানে পুঁজিবাজারে ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ ছয় হাজার কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর শেয়ারের দাম কমে গেলে মার্জিন ঋণ নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তখন সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ১০ হাজার কোটি টাকা আটকে যায়। সে সময় শেয়ারের দাম কমে গেলেও সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী তা বিক্রি করে বিনিয়োগকারীর ঋণ সমন্বয় করেনি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলো। পরবর্তী সময় শেয়ারের দাম এতো বেশি কমে যায় যে, গ্রাহকের নিজস্ব মূলধন ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময় কিছু শেয়ার বিক্রি করে চার হাজার কোটি টাকা ফেরত পাওয়া গেলেও এখনও আটকে আছে ছয় হাজার কোটি টাকা।

এ অবস্থায় ডিবিএ সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী পুঁজিবাজারে গতি ফিরিয়ে আনতে ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ সুদে ছয় হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘ইতোপূর্বে মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনে এ ব্যাপারে আপনার কাছে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে।’ এটা সম্ভব না হলে বিকল্প হিসাবে বন্ড ইস্যু করার অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অন্যান্যের মধ্যে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে দ্রুত ‘ফাইন্যান্সিং রিপোর্টিং কাউন্সিল’ গঠন, ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কর অবকাশ সুবিধা আরও দুই বছর বৃদ্ধি, যেসব শেয়ার বিক্রি হবে তার ক্যাপিটাল গেইনের ওপর  ট্যাক্স সুবিধা দেওয়া এবং আসন্ন এডিবি প্যাকেজে টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্টের কাজটি ডিএসইকে দেওয়ার অনুরোধ জানান ডিবিএ সভাপতি।

সিনিয়র সহ-সভাপতি মোশতাক আহমেদ সাদেক বলেন, ডিলারদের ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে চায় না। এ সমস্যা সমাধানে ব্যাংক ঋণের ডিলারদের এক্সপোজারের মধ্যে না রাখার দাবি জানান তিনি।

সহ-সভাপতি খুজিস্তা নূর-ই নাহরীন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারবাজারে আনার কাজ চলছে। বাজার ধসের পর সংস্কার কাজ চলেছে। ফলে এ সময়ে সরকারি শেয়ার ছাড়া হয়নি। তবে সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়েছে, কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। শিগগিরই কোম্পানির শেয়ারগুলো বাজারে ছাড়া হবে।

এডিবি’র প্যাকেজ নিয়ে তিনি বলেন, এডিবি আমাদের পুঁজিবাজারের ভালো বন্ধু। বিষয়টি নিয়ে এডিবি’র সঙ্গে আলোচনা করা হবে।