জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

হারুনুর রশিদ, জবি প্রতিনিধি: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংহতির ধারক-বাহক পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। আজ ২০ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বুড়িগঙ্গার নদীর তীরে গড়ে ওঠা একসময়কার পাঠশালাটি ১৮৫৮ সালে ব্রাহ্ম স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৮৭২ সালে জগন্নাথ স্কুল, ১৮৮৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজ, ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজ এবং ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্য আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের।

এবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের উদ্বোধন করা হবে। এবার ভয়াবহ করোনাকালীন মুহূর্তে জাঁকজমকপূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদ্যাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বল্প পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস, ২০২০’ উপলক্ষে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হবে এবং ৯টা ১৫ মিনিটে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভ উদ্বোধন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।

এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল একমাত্র ছাত্রী হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল উদ্বোধন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। অতঃপর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। সর্বশেষ বেলা সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের উদ্যোগে এক মনোজ্ঞ ভার্চুয়াল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর সাড়ে সাত একর জায়গা নিয়ে জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা সংকুলান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা, নতুন একাডেমিক ভবন এবং গবেষণা কাজের সুবিধার্থে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় ২০০ একর জমিতে দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদে ৩৬টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটে প্রায় ৬৭৯ শিক্ষক, ১৩ হাজার ১৬৫ শিক্ষার্থী ও ৬৮৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খুব একটা পুরোনো না হলেও প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে সুদীর্ঘ দেড়শ বছরেরও পুরোনো ইতিহাস। বাংলদেশের ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ছয় দফা ও ১১ দফার আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুথান ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলনের ইতিহাসে জগন্নাথের অবদান কখনও অস্বীকার করার মতো নয়।

প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সাগর হোসেন বলেন, ‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। মাত্র ১৪ বছরে আমাদের অনেক প্রাপ্তি আছে। বিসিএস, ব্যাংক জবসহ বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অসামান্য অবদান রাখছে। কিছুদিন আগে পরিত্যক্ত পলিথিন ব্যাগ থেকে ডিজেল ও পেট্রোল তেল তৈরির প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, ইন্টারনেট সুবিধা ও গবেষণাগারেও নজর বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে সমগ্র ক্যাম্পাস ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে। ই-বুক সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এখন সব বই বা গবেষণা পত্রিকা পড়ার জন্য শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই সব অনলাইনে প্রবেশ করতে পারেন।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষক বিদেশ থেকে পড়ালেখা করে বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে আসছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করায় দেশের মেধাবী শিক্ষার্থী আসছে। সব মিলিয়ে আমরা মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি, যার ধারাবাহিকতায় আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরীক্ষায় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ভালো ফলাফল করছে। এর বাইরে আমরা ছাত্রীদের আবাসন সংকট দূর করতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সংকট দূর হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবর্তনে ১৮ হাজার ২৮৪ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। দেড়শ বছরের ইতিহাসের ধারা লালনপালন করে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়টির আরও নাম, ডাক ও খ্যাতি হবে, দেশের আরও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি বের হবেন এখান থেকে। এগিয়ে যাক প্রাণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০