Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:13 am

জড়িত দুই চিকিৎসকের শাস্তি শুধু তিরস্কার!

আয়নাল হোসেন: ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয়ে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত দুই চিকিৎসককে শাস্তি হিসেবে করা হয়েছে শুধু তিরস্কার। গত ২৮ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এই তথ্য জানা যায়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (স্বাস্থ্যসেবা) বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, অন্যান্য সরঞ্জাম, বইপত্র ও সাময়িকী খাতে ক্রয়-প্রক্রিয়ায় বাজারদর কমিটির সদস্যরা কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণ করেছেন, যা বাজারদরের সঙ্গে মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কোনো কোনো পণ্য বাজারদরের চেয়ে তিন থেকে চারগুণ বেশি দামে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত মালামাল কেনা হয়। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক (বর্তমানে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) ডা. মু. রয়েস উদ্দিন ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আনিসুর রহমান হাওলাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অপরাধ প্রমাণিত হয়। 

আদেশে আরও বলা হয়, দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩ (খ) ও ৩ (ঘ) বিধি মোতাবেক অসদাচরণ ও দুর্নীতির দায়ে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। একই সঙ্গে তাদের কারণ দর্শানোরও নোটিস দেয়া হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর তাদের ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়। শুনানিতে ডা. রয়েস উদ্দিন সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হন এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি দণ্ড পাওয়ার যোগ্য বলে আদেশে বলা হয়।

ওই আদেশে বলা হয়, এ ধরনের কাজে তার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তার কর্তব্যকর্মে গাফিলতির বিষয়টি পর্যালোচনান্তে প্রথমবার কৃত অপরাধ হিসেবে নমনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৪ (২) ক মোতাবেক ডা. রয়েস উদ্দিনকে ‘তিরস্কার’ লঘুদণ্ড আরোপ করা হলো এবং ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীল ও সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভাগীয় মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয় বলে আদেশে বলা হয়েছে।

যদিও বিধিমালার ৪ (২) খ-তে বলা আছে, চাকরি বা পদ সম্পর্কিত বিধি বা আদেশ অনুযায়ী পদোন্নতি বা আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধির অযোগ্যতার ক্ষেত্র ব্যতীত, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা; (গ)তে বলা আছে, কর্তব্যে অবহেলা বা সরকারি আদেশ অমান্য করার কারণে সংঘটিত সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ অংশ বা উহার অংশবিশেষ, বেতন বা আনুতোষিক হতে আদায় করা; অথবা (ঘ)তে বলা আছে, বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ। এ তিনটি উপবিধিতে শাস্তি না দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে তাদের শুধু তিরস্কার দেয়া হয়। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, কেনাকাটায় দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত দুই চিকিৎসক উচ্চ তদবির করে শাস্তি লঘু করেছেন। তবে কোনো কর্মকর্তাকে তিরস্কার করা হলে তিনি আগামী এক বছর পর্যন্ত কোনো ধরনের পদোন্নতি, টাইমস্কেল কিংবা সিলেকসন গ্রেড প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন। তারা এই অভিযোগ থেকে সম্পূর্ণ মওকুফের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।