নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশ দেন তিনি। সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান ও প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমসহ সংশ্লিষ্টরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, একনেক বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব উত্তরার দুর্ঘটনার প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। প্রাথমিক প্রতিবেদনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির তথ্য জানা গেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনা খুব মন দিয়ে শুনেছেন এবং আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত এবং যে কোম্পানি জড়িত, তাদের সবার বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া যেসব কোম্পানি কাজে অবহেলা করে এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেয়, সেগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ: এদিকে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরশু বৃহস্পতিবার নগরভবনে বৈঠক করবেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। সে পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর কাজ শুরু হবে। সোমবার উত্তরায় প্রাইভেট কারে বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের গার্ডারচাপায় পাঁচজন নিহত হন। গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসব কথা বলেছেন মেয়র।
বিআরটি প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মেয়র আতিকুল বলেন, ‘বাস র্যাপিডের এমডি রয়েছেন, পিডি রয়েছেন। আমি সব কাজ বন্ধ করে দেব। আগামী পরশু (বৃহস্পতিবার) আমার সঙ্গে বসবেন। সড়কে কী কী নিরাপত্তা দেয়ার কথা রয়েছে, যা যা আছে, সব দেবেন। তারপর কাজ শুরু করবেন।’
মেয়র আরও বলেন, ‘কমপ্লায়েন্স (সড়কে নিরাপত্তা দেয়ার নিয়ম) নিশ্চিত করার পর সড়কে কাজ করা যাবে। কোথাও একটু সিমেন্ট পড়ে যাবে, কোথাও রড পড়ে যাবে, তখন আবার প্রাণহানি হবে, সেটা হতে পারে না।
খামখেয়ালির কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন মেয়র। তিনি বলেন, যে কোম্পানি এ কাজের চুক্তি করেছে, তারা সব শর্ত মেনেই চুক্তিতে সই করেছে। সরকার এসবের পেছনে টাকা দিচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে খামখেয়ালিপনা।
তবে খামখেয়ালিপনার দায় ঠিকাদারের ওপর চাপিয়ে বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে ঠিকাদারদের কাছ থেকে আমরা এই খামখেয়ালিপনা পাচ্ছি। কোনোভাবেই আমরা তাদের কমপ্লায়েন্সে আনতে পারছি না। সড়ক নিরাপত্তা যে একেবারে নেই, তা নয়। তবে ঘাটতি রয়েছে। আমরা দুঃখিত।’ দুর্ঘটনা নিয়ে ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদন সচিবের কাছে জমা দিয়েছে।