জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান আওয়ামী লীগের

নিজস্ব প্রতিবেদক: ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য কিছু অপশক্তি মাঠে নেমেছে বলেও তারা মন্তব্য করেছেন। গতকাল শুক্রবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের মহিলা-বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেদিন হালবিহীন নৌকা পরিচালনার আত্মিক ও মানসিক শক্তি কেউ দেখাতে পারেনি। আমি কাউকে ছোট করতে চাই না; তবে বলতে চাই আওয়ামী লীগের কর্মীরা কখনও মাথা নোয়ায় না। কর্মীরাই এসে হাল ধরে, এটা তারা বারবার প্রমাণ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের অনুচর জিয়াউর রহমানকে ঢুকিয়ে দিয়ে, খন্দকার মোশতাকদের ঢুকিয়ে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে চেয়েছিল। ব্যর্থ হয়ে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে। সেদিন আমাদের দলের ভেতরে অস্থিরতা ছিল, সেই অস্থিরতা শুভফল বয়ে আনেনি। জেনারেল জিয়াউর রহমানরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানতে পারেনি। মোশতাকরা মানতে পারেনি বলে বাংলাদেশ মুসলিম বাংলা নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭২ সালে। এরা সারাদেশে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। সেসময় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। সেদিন বিভাজনের মধ্য দিয়ে গণবাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে সত্য কথা আমাকে বলতেই হবে। সেদিন জাসদ সৃষ্টি ও গণবাহিনী সৃষ্টি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছিল। সেদিন আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার করা হয়েছিল।

নানক আরও বলেন, আজকে যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, তখন কিছু অপশক্তি মাঠে নেমেছে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য জনগণের মাঝে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছে। গতকাল একটি হরতাল পালন হয়ে গেল বাংলাদেশে। কেউ টের পেল না। রাস্তায় যানজট। আমাদের খুব সতর্ক হতে হবে। ওরা আবার নেমেছে। ওরা বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবে না। সে কারণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা নেমেছে। তারা পাকিস্তানি প্রেসক্রিপশনে চলছে। এদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সেদিন কেন আমরা কার্যকর প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারলাম না; রাজপথে আন্দোলন করতে পারলাম না সেই ব্যর্থতা নিয়েও আমাদের কথা বলতে হবে। এ ব্যর্থতার দায় আমাদের নিতে হবে। ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি, আজ যখন বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, সেই গৃহহীন মানুষদের ঘর দেয়া হচ্ছে, মানুষের কল্যাণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সেই মুহূর্তে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তারা আবার মাঠে নেমেছে। আমাদের সাহসিকতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মানুষের কাছে যেতে হবে। সকল ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে।

আলোচনা সভায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, বিজয়ের আনন্দ ক্ষণস্থায়ী, পরাজয়ের গ্লানি চিরস্থায়ী। এই পরাজয়ের গ্লানি মোচন করা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার জন্য ’৭১-এর পরাজিত শক্তি জাতির পিতাকে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর প্রথম স্বপ্ন ছিল এ দেশের স্বাধীনতা, দ্বিতীয় স্বপ্ন ছিল এ দেশের মানুষের মুক্তি। তাই স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই তিনি অর্থনৈতিক মুক্তি সংগ্রামের ডাক দেন। জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী, ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রকারী, নেপথ্য কারিগর ও পরবর্তীকালে হত্যাকারীদের রক্ষাকারী ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতকদেরও বিচার করতে হবে।

আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক সুলতানা শফির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম প্রমুখ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০