নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জনগণই আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। তারা এটা করেছে শুধু এ কারণেই যে, আমরা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজউকের ১১টি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর রমনা পার্কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ও দেশের জনগণের জন্য আমাদের একটা দায়িত্ব রয়েছে। আমরা সেই দায়িত্ববোধ থেকেই দেশ চালিয়ে যাচ্ছি।
সরকারপ্রধান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য, ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা। আমরা ই-গভর্ন্যান্স চালু করব, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য-শিক্ষাÑপ্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করব।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এটা করা সম্ভব হয়েছে এ কারণেই যে, দেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। শুধু আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায়ও আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে সক্ষম দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে তার সরকার এরই মধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো যাতে পূরণ হয়, তার নিশ্চয়তা রেখেই সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে এবং তা সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের জীবনে যাতে একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ আসে, তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকারের উন্নয়ন কেবল রাজধানীকেন্দ্রিক নয়, বরং একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত। সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা বা ইন্টারনেট কানেকশন পৌঁছে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে আমরা স্যাটেলাইট যুগেও প্রবেশ করেছি। তাছাড়া ’৯৬ সালে যে বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম, মাত্র এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট তাকে চার হাজার ৩০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বৃদ্ধি করার পর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে দেখি, তা আবার তিন হাজারে (মেগাওয়াট) নেমে গেছে। সেখান থেকে আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের প্রত্যেকটি ঘরকে আমরা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করতে পেরেছি। প্রায় ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা মানুষকে দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। পাশাপাশি মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় কভিড-১৯-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশনের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানির ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ইংল্যান্ডে প্রায় ১৫০ ভাগ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এমন অবস্থা ইউরোপের বিভিন্ন দেশেই চলছে। কাজেই এখানেও আমি সবাইকে অনুরোধ করব, বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সবাই একটু সাশ্রয়ী হবেন।
দীর্ঘস্থায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২৩ সালে বিশ্ব সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক মন্দা প্রত্যক্ষ করবে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস উল্লেখ করে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো এবং প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের খাবারের উৎপাদন বাড়াই তবে অর্থনৈতিক মন্দা আঘাত করতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও তার সরকারের বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও জিডিপিতে গড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে সফলভাবে চলছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন। বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের ওপর অনুষ্ঠানে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে:
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকল্প: ঢাকার আজিমপুরে বিচারকদের জন্য ২০ তলাবিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ (৯০টি ফ্ল্যাট), তেজগাঁওয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল (১৩ তলা) আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (ছয়টি ১৩ তলা ভবনে ২৮৮টি ফ্ল্যাট), মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট, নোয়াখালী সদরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ (৯টি ১০ তলা ভবনে ৩২৪টি ফ্ল্যাট)।
এছাড়া রয়েছে ঢাকার রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রমনা লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার লাইব্রেরি ভবন, অ্যানেক্স ভবন ও অডিটোরিয়াম নবায়নসহ আনুষঙ্গিক কাজ।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প: মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য এক হাজার ৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট (স্বপ্ননগর-১) নির্মাণ, মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনে ১৪ তলাবিশিষ্ট এক হাজার ২৫০ বর্গফুট আয়তনের ১০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ এবং সিলেটের সুনামগঞ্জে সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন।
রাজউকের প্রকল্প: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পূর্বাচল পানি সরবরাহ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) ও পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয় ভবন, পলখান উচ্চ বিদ্যালয় ও পূর্বাচল আদর্শ কলেজ ভবন।