Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 9:59 pm

জনগোষ্ঠীটির দ্রুত আইনি স্বীকৃতি প্রয়োজন

 

‘হিজড়াদের’ ওপর বিরক্ত নন, এমন মানুষের সংখ্যা বোধহয় কম। তাদের উৎপাতের নানা খবরই পাওয়া যায়। রাস্তাঘাট, রেল, স্টিমার বা লঞ্চে এ জনগোষ্ঠীর চাঁদাবাজির শিকার কমবেশি সবাই হয়েছেন। কোনো এলাকায় শিশু জন্মানোর খবর পেলে দল বেঁধে হিজড়াদের টাকা আদায়ের ঘটনা সাধারণ। এসব নানা কারণে মানুষ তাদের ওপর বিরক্ত হলে দোষ দেওয়া যায় না; কিন্তু খুব কম মানুষই এদের কীভাবে মূলধারায় ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে ভাবেন বা কাজ করেন। হিজড়াদের একটি আনুষ্ঠানিক নামও রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গ। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের আইনি স্বীকৃতির উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে তা থেমে আছে। গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছে এ-সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদন অনুসারে, এখন পর্যন্ত হিজড়ার গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা নির্ধারণ করা যায়নি। বলা হয়েছে, হিজড়া শনাক্তকরণে জটিলতা, বিতর্কিত সংজ্ঞা, অদূরদর্শী নীতিমালা ও বিদ্যমান নীতিমালাগত জটিলতা থাকায় হিজড়া জনগোষ্ঠী আইনি স্বীকৃতি ও কাজের বৈধতা পায়নি। যতদিন আইনি স্বীকৃতি পাওয়া না যাবে, ততদিন তারা পিছিয়েই থাকবে।

আইনি স্বীকৃতি ছাড়াও একটি জনগোষ্ঠী এগিয়ে যেতে পারে, যদি সমাজের অপরাপর অংশ সহায়ক হয় এবং ওই জনগোষ্ঠী নিজে থেকে এগিয়ে যেতে চায়। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের সমাজ হিজড়াদের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। হিজড়া জনগোষ্ঠীও মূলধারার কাজে সম্পৃক্ত হতে চায় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। হিজড়ারা দলবেঁধে যেভাবে লোকজনকে নাস্তানাবুদ করে, তাতে তাদের ওপর মানুষের নাখোশ হওয়া স্বাভাবিক। হিজড়ারাও স্বাভাবিকভাবে কিছু করতে চাইলে এর বাধা আসে সমাজ থেকেই এবং বাধ্য হয়ে তাদের বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হয়। এ এক দুষ্টচক্রের মতো! হিজড়া জনগোষ্ঠীর কোনো সদস্য যদি স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য কাজ করতে চায়, তাহলে গুটিকতক এনজিও ছাড়া অন্যরা কি তাদের কাজের সুযোগ করে দেবে? উত্তরটি নেতিবাচক হওয়ারই কথা। ফলে এ দুষ্টচক্র সহজে ভাঙার নয়। চক্রটি ভাঙতে হলে প্রয়োজন আইনি স্বীকৃতি। এর অভাবে হিজড়ারা নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সভায় হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২২ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ইশতেহারও প্রকাশ করা হয়; কিন্তু একে আইনি বাধ্যবাধকতায় আনার জন্য জাতীয় সংসদে যেমন বিল আকারে উত্থাপন করা হয়নি, তেমনি এ-বিষয়ে গেজেটও প্রকাশ হয়নি। যেহেতু আইনি স্বীকৃতির সঙ্গে হিজড়া জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের যোগসূত্র রয়েছে, সুতরাং আমরা আশা করবো, যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ দিয়ে তাদের জীবনমান উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থাগুলোও এগিয়ে আসবে বলে আমরা আশা রাখতে চাই।