জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক ছয় মাসে শীর্ষ খেলাপিদের থেকে আদায় মাত্র ২%

রোহান রাজিব: রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে পারছে না। এসব ঋণখেলাপির কাছে এক রকম জিম্মি হয়ে আছে এ দুটি ব্যাংক। জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ৫৮ শতাংশ এবং অগ্রণীর ৪৫ শতাংশ আটকে রয়েছে শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে। প্রতিবছর এসব ঋণখেলাপির কাছ থেকে অর্থ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু বেঁধে দেয়া এসব লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণখেলাপির কাছ থেকে অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংক দুটি। ফলে আদায় অবস্থা দাঁড়িয়েছে নাজুক পরিস্থিতিতে। গত ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) সময়ে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছ থেকে মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র দুই শতাংশ অর্থ আদায় করতে পেরেছে দুই ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর স্বাক্ষরিত জুনভিত্তিক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পর্যালোচনা প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছর লক্ষ্যমাত্রা দেয়। তবে এটা শুধু দেয়ার জন্যই। কারণ শীর্ষ ঋণখেলাপি যারা, তাদের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ঋণ দেয়া হয়েছে। এসব ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানতও রাখা হয়নি। তাই মামলা করার পরও এসব ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায় হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে ৮৭০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটি প্রথম ছয় মাসে মাত্র ১৬ কোটি টাকা আদায় করেছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র দুই শতাংশ। গত বছরের পুরো সময়ে ৮০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ৯১ কোটি টাকা বা ১১ শতাংশ আদায় করতে পেরেছিল। এছাড়া ২০২৩ সালে ব্যাংকটির অন্যান্য ঋণখেলাপি থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রথম ছয় মাসে আদায় হয় ১১০ কোটি টাকা বা ১৭ শতাংশ। ২০২২ সাল শেষে জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে ঋণের স্থিতি ছিল আট হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। আর অন্য খেলাপির কাছে ছিল ছয় হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা।

এদিকে অগ্রণী ব্যাংকেরও একই পরিস্থিতি। ২০২৩ সালে অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছ থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটি প্রথম ছয় মাসে মাত্র ১২ কোটি টাকা বা দুই শতাংশ ঋণ আদায় করতে পেরেছে। ২০২২ সালে ব্যাংকটি ৩০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৯৭ কোটি টাকা বা ৩২ শতাংশ আদায় করতে সক্ষম হয়। গত ছয় মাসে অন্যান্য ঋণখেলাপির কাছ থেকে আদায় করেছে ২০২ কোটি টাকা বা ২৪ শতাংশ। ২০২৩ সালে অন্য খেলাপি থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৮৫০ কোটি টাকা। ২০২২ সাল শেষে অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে ঋণের স্থিতি ছিল ছয় হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। আর অন্য খেলাপির কাছে ছিল আট হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা।

অবলোপন ঋণ থেকেও আদায় পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়: ২০২৩ সালে জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণ অবলোপন থেকে নগদ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয় ৩৩০ কোটি টাকা। প্রথম ছয় মাসে এর বিপরীতে আদায় করেছে ২৮ কোটি টাকা বা আট শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় করেছে মাত্র ১৯ কোটি টাকা বা পাঁচ শতাংশ। ২০২২ সালেও অবলোপন করা ঋণ থেকে দুই ব্যাংকের আদায় পরিস্থিতি সন্তোষজনক ছিল না। জনতা ব্যাংক ৩৩ শতাংশ ও অগ্রণী ব্যাংক ২২ শতাংশ ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল।

বেড়েছে খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি: গত জুন শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা ডিসেম্বর শেষে ছিল ১৪ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা বা ১৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। জুন শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ১৮৯ কোটি টাকা।

অপরদিকে অগ্রণী ব্যাংকে জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১৬ হাজার ৪৯৫ কোটি বা ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা ডিসেম্বর শেষে ছিল ১৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বা ২২ দশমিক ৩১ শতাংশ। জুন শেষে অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ তিন হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে কেন অর্থ আদায় করতে পারছে না অগ্রণী ব্যাংক এ বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুরশেদুল কবীর শেয়ার বিজকে বলেন, শীর্ষ ঋণখেলাপির কাছ থেকে কীভাবে অর্থ আদায় করা যায়, সে বিষয়ে ব্যাংকের বোর্ড আলাদাভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। শীর্ষ ঋণখেলাপিদের মামলার পরও অন্য কোন পন্থায় অর্থ আদায় করা যায়, সে পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের অন্যান্য ব্যাংক থেকে এখন অগ্রণী ব্যাংক আমানত, ঋণ ব্যবস্থাপনা, রেমিট্যান্স ও এজেন্ট ব্যাংকিংসহ অন্যান্য দিকে ভালো করছে। তবে আমাদের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। মূলত কভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ছাড় দিয়েছিল। পরিস্থিতি ভালো হওয়ার পর সে সুযোগ তুলে নেয়া হয়। তবে অনেক গ্রাহকের ব্যবসা খারাপ হওয়ার কারণে ঋণখেলাপি হয়ে গেছে। আমরা এখন তাদের সঙ্গে বসে আলাপ করছি ঋণগুলো যাতে পুনঃতফসিল করে। আশা করছি, খেলাপি ঋণের হার কমে আসবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০