জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়: বন্ধকি সম্পত্তির ক্রেতা মিলছে না নিলামে

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: খেলাপি ঋণ আদায়ে চট্টগ্রামের এক পোশাক ব্যবসায়ীর বন্ধকি সম্পত্তি (জমি ও ফ্ল্যাট) নিলামে তোলা হলেও ক্রেতা পাচ্ছে না ঋণ প্রদানকারী রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। ফলে বিপাকে পড়েছে ব্যাংক।

জানা গেছে, জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রাম বৈদেশিক বিনিময় শাখা থেকে দু’দফা ঋণ নেন পোশাক ব্যবসায়ী মৃদুল চক্রবর্তী। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান প্রিটি অ্যাপারেলস, বনবীথি ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড ও বনলতা গার্মেন্টস লিমিটেডের অনুকূলে এই ঋণ নেওয়া হয়। যা গত বছর ডিসেম্বর শেষে সুদাসলে মোট দাঁড়িয়েছে ১১৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রিটি অ্যাপারেলসের কাছে ব্যাংকের পাওনা সুদসহ ৩৮ কোটি ১২ লাখ টাকা এবং বনবীথি ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড এবং বনলতা গার্মেন্টস লিমিটেডের কাছে সুদসহ পাওনা ৭৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ব্যবসায় সফল না হওয়ায় মৃদুল চক্রবর্তী ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না বলে জানা গেছে।

ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গৃহীত ঋণের বিপরীতে ব্যবসায়ী মৃদুল চক্রবর্তীর খুলশী আবাসিক এলাকায় ইকুইটি সেলভেস্ট্রা বিল্ডিংয়ের ২য় তলায় ফ্ল্যাট ২ (৩০৫০ বর্গমিটার) এবং চান্দগাঁও এলাকায় সিডিএ কালুরঘাট হেভি ইন্ডস্ট্রিয়াল এরিয়ার ৩৫ দশমিক ৬৯ কাঠা জমি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রয়েছে। পাওনা আদায়ে জনতা ব্যাংক এসব সম্পত্তি নিলামে তুললেও এ নিলামে কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি। ফলে অবিক্রীত রয়ে গেছে এসব বন্ধকি সম্পদ।

এদিকে নিলাম ঠেকাতে আদালতে রিট করেছেন মৃদুল চক্রবর্তী। এ অবস্থায় পাওনা আদায়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংক। জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রাম বৈদেশিক বিনিয়ম শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক সরওয়ার কামাল শেয়ার বিজকে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘বনলতা গ্রুপটির অবস্থা এখন ভালো না। নিলামে সম্পদ তোলা হলেও কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি। এর মাঝে প্রতিষ্ঠানটি হাইকোর্টে রিট করে। আমাদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। এ অর্থ উদ্ধারে বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠানটির মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বারবার তাগাদা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি টাকা ফেরত না দেওয়ায় অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ১২ ধারা অনুসারে যেখানে যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায় বিক্রয়ের নিলাম টেন্ডার আহ্বান করে। প্রতিষ্ঠানটি গার্মেন্টস খাতে বিনিয়োগের জন্য ঋণ সুবিধা গ্রহণ করলেও পরে ঋণের টাকা অন্য খাতে স্থানান্তর করেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে মৃদুল চক্রবর্তীর সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে কয়েক মাস ধরে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বন্ধ রেখেছে বনলতা গ্রুপ। নগরীর কোতোয়ালি থানার পাশে ১০ এইচএসএস রোডে বনলতা গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন মালামাল সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বস্তাভরা বিভিন্ন জিনিসপত্র বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর একজন কর্মচারী পুরো দেখাশোনা করছে। এ কর্মচারী জানান, এ গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো নগরীর আতুর ডিপো এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। ধারাবাহিক লোকসানের দায়ে বন্ধ হয় কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এতে বিপাকে পড়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লেনদেন থাকা ব্যাংক, পাওনাদার, গ্রাহক ও নিয়োজিত শ্রমিকরা। এর মাঝে কারখানার যন্ত্রপাতিও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী।

প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ক্রমাগত লোকসানে থাকায় একে একে বেশিভাগ কর্মকর্তাদের ছাঁটাই করা হয়। অফিসে পাওনাদারদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় মালিকরা কেউ এখানে আসেন না। মাঝে মাঝে একজন কর্মচারী অফিস চালু রাখেন সীমিত সময়ের জন্য।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০