নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের ঋণ মঞ্জুর না করায় রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হলো ড. জামালউদ্দিন আহমেদকে। একইসঙ্গে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. এসএম মাহফুজুর রহমানকে। তিনি বর্তমানে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির উপাচার্য।
গতকাল এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তাতে উল্লেখ করা হয়, জনতা ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে ড. এসএম মাহফুজুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হলো। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তার নিয়োগ অনুমোদন নিতে জনতা ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হলো।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব জেহাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত পৃথক আদেশে জামালউদ্দিন আহমেদকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। এসএম মাহফুজুর রহমান ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ছিলেন।
জানা যায়, গত বছরের ২৮ আগস্ট তিন বছরের জন্য জনতা ব্যাংক চেয়ারম্যান করা হয় জামালউদ্দিন আহমেদকে। পেশায় তিনি হিসাববিদ। পাশাপাশি অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক। চেয়ারম্যান পদ থেকে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো।
যদিও ১১ মাসের মাথায় তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো। একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঋণ প্রস্তাবে জামালউদ্দিন আহমেদ নিজেই পরিচালক হিসেবে ছিলেন। এ নিয়ে আপত্তি উঠলে তিনি পরিচালক পদ থেকে সরে আসেন। এরপর আরও গ্রাহকের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠার খবর পাওয়া যায়, যা নিয়ে ব্যাংকটির কর্মকর্তারাও বিরক্ত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে সরিয়ে দিল সরকার।
জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পাওয়ার আগে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। ওই সময়েও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে। জামালউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য জানতে ফোনে চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির কারণে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে জনতা ব্যাংক। গত মার্চ শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৭ শতাংশ এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ। মার্চ শেষে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণ ছিল ৫১ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে কাউকে সাধারণত তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে গত কয়েকজনই চেয়ারম্যান হিসাবে মেয়াদ শেষ করতে পারছেন না। এদিকে যোগদানের দিন থেকে তিন বছরের জন্য মাহফুজুর রহমান চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। অবশ্য সরকার চাইলে যেকোনো সময়ে তার নিয়োগ বাতিল হতে পারে।
