Print Date & Time : 30 June 2025 Monday 7:47 pm

জনতা ব্যাংকে আরও শত কোটি টাকার জালিয়াতি

শেখ আবু তালেব: জনতা ব্যাংকে নতুন করে আরও একটি জালিয়াতি ধরা পড়েছে। রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ শাখায় শতাধিক কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের কারণে ডিজিএমসহ তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জনতা ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেছে। এছাড়া ভুয়া ঋণপত্রের বিপরীতে স্থানীয় বিল ক্রয়ের অভিযোগে শাখা ব্যবস্থাপক সেরাজুল ইসলাম (এজিএম) ও ডিজিএম শফিকুল ইসলামকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার পরও ভুয়া ঋণপত্র কেনা হচ্ছে বলে শাখাটিতে বিশেষ পরিদর্শন করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভুয়া ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে শতাধিক কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় জনতা ব্যাংকের কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ শাখার ডিজিএম খান আবুল কালাম, এজিএম রথীন্দ্রনাথ ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. হানিফকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে এ ঘটনায় পাঁচজন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল। সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয় বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, কয়েকটি শাখায় ভুয়া ঋণপত্রের বিপরীতে স্থানীয় বিল ক্রয়ে জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ায় পরিচালনা পর্ষদ ও জনতা ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের পক্ষ থেকে শাখাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয় নতুন করে কোনো স্থানীয় বিল না কেনার জন্য। শীর্ষ পর্যায়ের এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাঁচটি ঋণপত্রের বিপরীতে স্থানীয় বিল কেনে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ শাখা। কিন্তু বিল নগদায়ন না হওয়ায় পরবর্তীতে ঋণপত্র খোলা সংশ্লিষ্ট পাঁচ প্রতিষ্ঠানের নামে বাধ্যতামূলক (ফোর্সড) ঋণ দেওয়া হয়। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়লে অর্থ উদ্ধার ও দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তির সুপারিশ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে অর্থ উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেও উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তীতে অর্থ উদ্ধার করা হবেÑএমন শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে দফায় দফায় সময় নেয় জনতা ব্যাংক। ওই সময়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন এসএম আমিনুর রহমান। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি এখনও। শতাধিক কোটি টাকা গচ্চা দিয়ে এটি ঝুঁকিপূর্ণ শাখায় পরিণত হয়েছে।
তৎকালীন এমডি এসএম আমিনুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি পাঁচ বছর আগের বিষয়। তাই বিষয়টি মনে করতে পারছি না।
জানা যায়, ২০১৩ সালে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলা হয় পাঁচটি কোম্পানির নামে। এর মধ্যে ফাহমি নিটওয়্যারের ৩৭ কোটি ১৮ লাখ, তামান্না সোয়েটার্সের চার কোটি ৪ লাখ, অন্বেষা স্টাইলের ৫ কোটি ১৬ লাখ, আর্টটেক্স লিমিটেডের ৭ কোটি ৪১ লাখ, বিঅ্যান্ডসি ফ্যাশনের ২ কোটি ২৩ লাখ, ইলাইন অ্যাপারেলসের ২ কোটি ২৭ লাখ ও ফ্যাশন ক্রাফট নিটওয়্যারের ৩৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র রয়েছে।
কোম্পানিগুলো রফতানিমুখী পণ্যের জন্য কাঁচামাল আমদানির নামে এসব ঋণপত্র খোলে। এক পর্যায়ে ব্যাংকের কাছে ঋণপত্র বিক্রি করে দেয় কোম্পানিগুলো। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হলেও রফতানিকারক কোনো কাঁচামাল পাঠায়নি। ফলে ব্যাক টু ব্যাকের এ ঋণপত্রে দায় ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
এদিকে দায় এড়াতে ডিজিএম খান আবুল কালাম কোম্পানিগুলোর বিপরীতে সমপরিমাণ অর্থের ফোর্সড ঋণ করে দেয়। তা আদায় না হওয়ায় খেলাপিতে পরিণত হয়। কিন্তু গ্রাহকের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ব্যাংক এ ঋণগুলো পুনঃতফসিল করে। তারপর দীর্ঘ পাঁচ বছরেও এ অর্থ আদায় হয়নি। অবশেষে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়ে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে।
এদিতে গত তিন সপ্তাহ ধরে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ শাখা নিয়ে বড় ধরনের বিপাকে জনতা ব্যাংক। বেশ পুরোনো এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে এতদিন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও পরিদর্শন বিভাগ কি তাহলে অকার্যকর হয়ে পড়েছে, না অকার্যকর করে রাখা হয়েছেÑএমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে।
এ বিষয়ে গতকাল জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। কিন্তু কেউ মুখ খুলতে নারাজ। তবে একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, জনতা ব্যাংকে অনিয়মের জন্য ব্যাংকের কর্মকর্তারাই দায়ী। তাদের লোভের কাছে বলিদান হয়েছে ব্যাংকের স্বার্থ। এ কারণেই ব্যাংকের এ অবস্থা।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুছ ছালাম আজাদের সঙ্গে গতকাল কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে তিনি কথা বলেননি। তবে গত মাসের শেষ দিকে তিনি বলেছিলেন, কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ শাখার বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে জানানো হবে।