নিজস্ব প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের কাছে যে ওয়াদা দিয়ে ভোট নিয়েছেন, তা কখনও ভুলবেন না। মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। গতকাল মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও কাউন্সিলরদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধিদের প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী মেয়র আইভীকে শপথবাক্য পাঠ করান। নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথবাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেকোনো একজন রাজনৈতিক নেতার জন্য নিজের স্বার্থ না দেখে পরের স্বার্থে কাজ করা, জনগণকে কতটুকু দিতে পারলাম, কতটুকু তাদের জন্য করতে পারলাম সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। যতটুকু আপনি দিতে পারবেন, তাতেই আত্মতৃপ্তি, নিজের ভোগবিলাসে নয়। রাজনৈতিক নেতা হতে হলে জনকল্যাণে কাজ করতে হয়, নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা আমাদের সেই আদর্শ শিখিয়ে গেছেন। আমি আশা করি, সেই আদর্শ নিয়েই আপনারা চলবেন। তাহলে আপনার নেতৃত্বও থাকবে, জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবেন, বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন। জনপ্রতিনিধিদের এটা মনে রাখতে হবে, মানুষ খুব সচেতন। সেটা মাথায় রেখেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
নাসিক নির্বাচনের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনারা বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। জনগণ তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে এবং তাদের মনমতো প্রার্থী নির্বাচন করতে পেরেছেন। এজন্য নির্বাচন কমিশনসহ নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সবার প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি।
উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জ ঢাকার ঠিক পাশেই এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। কাজেই সেক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি বলেন, যদিও আমাদের বিরোধী দল অনেক অপপ্রচার চালায়, কিন্তু তারা কখনও আয়নায় নিজের চেহারা দেখে না যে, এই বিএনপি-জামায়াত অথবা অন্যরা যারা এই ধরনের সমালোচনা করে থাকে, তাদের প্রতিষ্ঠা কার হাত দিয়ে; অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত দিয়ে। জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়ার কোনো অভ্যাসই তাদের ছিল না; বরং কেড়ে নেয়া, চুরি করাই তাদের অভ্যাস ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের অধিকারের অর্থও তারা বোঝে না। সেই শিক্ষাই তাদের নেই। তারা বোঝে সন্ত্রাস, তারা বোঝে দুর্নীতি, তারা বোঝে জঙ্গিবাদ। তারা বাংলাভাই সৃষ্টি করতে পারে, তারা মানুষ হত্যা করতে পারে, হাত কাটতে পারে, চোখ কাটতে পারে, মানুষের ঘরবাড়ি দখল করতে পারে এগুলো তারা পারে। সেই সুযোগটা পাচ্ছে না বলেই বোধহয় তাদের বেশি আক্ষেপ।
বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের তো নেতৃত্ব বলে কিছু নেই। একজন এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত বন্দি, আমরা দয়া করে তাকে তার বাড়িতে থাকার একটা সুযোগ করে দিয়েছি। আরেকজন ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং দুর্নীতি… সেই দুর্নীতির তথ্য ছিল… আমরা না, এটা আমেরিকার এফবিআই তুলে ধরেছে, তারাই সাক্ষ্য দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকারে বিশ্বাসী বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি জনগণ তার ভোট দিয়ে তার মনমতো প্রার্থী নির্বাচিত করবে, যে তাদের জন্য কাজ করবে। জনগণ কখনও ভুল করে না, এটাই হলো বাস্তবতা। সেটা নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে ভালোভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কে তার জন্য কাজ করবে, সেটা জনগণ নিজেরাই বেছে নিতে পারেন। সেই বিবেচনা জনগণের আছে এবং জনগণের ওপর আস্থা রেখেই আমরা আমাদের যত রকম কাজ করি।
তিনি বলেন, আমাকে চিন্তা করতে হয়, কারণ আমারও তো বয়স হয়েছে। ৭৫ বছর বয়স আমার, কাজেই আর কতদিন বাঁচব? কিন্তু এমনভাবে দেশের কাঠামো করে দিয়ে যেতে চাই, এমনভাবে পরিকল্পনা করে দিতে চাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারাটা ধরে রাখতে পারে, উন্নত জীবন পায়, সুন্দর জীবন পায়।
টানা মেয়াদে ক্ষমতায় আসার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটানা এই ১৩ বছর ক্ষমতায়, যার ফলে আজকে দেশের উন্নতি হচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।