নিজস্ব প্রতিবেদক: করদাতা কোম্পানির আস্থা তৈরি করছে ই-টিডিএস (ইলেকট্রনিক ট্যাক্স ডিডাক্ট অ্যাট সোর্স)। ফলে উৎসে কর আদায়ের ডিজিটাল এ প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কর জমার পরিমাণ। উদ্বোধনের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে নিবন্ধন দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন হাজার ৯০০, আর কর জমা হয়েছে প্রায় ২৭০ কোটি টাকা। ই-টিডিএস’কে আরও জনপ্রিয় করতে এবং কোম্পানিগুলোকে উদ্ধুদ্ধ করতে কর অঞ্চলগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। প্রতিষ্ঠানের কেটে রাখা উৎসে কর যাতে সহজে সরকারি কোষাগারে জমা হয়, সেজন্য উৎসে কর আদায় প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজড করার অংশ হিসেবে ই-টিডিএস সিস্টেম চালু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কর্মকর্তারা বলছেন, ই-টিডিএস বাস্তবায়িত হলে উৎসে কর ফাঁকি বন্ধ হয়ে যাবে।
এনবিআর সূত্রমতে, আয়কর আইনে ৩৪টি ধারায় উৎসে কর কর্তন এবং ১৯টি ধারায় উৎসে কর সংগ্রহ করার বিধান রয়েছে। এ ৫৩টি ধারার অধীনে উৎসে কর কর্তন ও সংগ্রহ ম্যানুয়ালি মনিটরিং করা সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। প্রতিটি উৎসে কর কর্তনে কর্তৃপক্ষকে দুটি অর্ধবার্ষিক রিটার্ন, ২৪টি মাসিক বিবরণীসহ সর্বমোট ২৬টি রিপোর্ট দাখিল করতে হয়। এনবিআরের আদায় করা আয়করের মধ্যে ৬২-৬৫ শতাংশই উৎসে কর থেকে আসে। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা উৎসে কর আদায় হয়েছে।
সূত্রমতে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎসে কর কর্তন ও মামলার জট কমানোসহ কর ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর এনবিআর ই-টিডিএস সিস্টেম চালু করে। অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছিলেন, ‘এ সিস্টেম উৎসে কর কর্তন, সরকারি কোষাগারে জমাদান ও রিপোর্টিংয়ের অটোমেটেড সিস্টেম কর ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে। মামলা জট কমে আসবে। এছাড়া রাজস্ব ফাঁকি কমবে এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে।’
সূত্র আরও জানায়, উৎসে কর কর্তন ব্যবস্থাপনার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ই-টিডিএস সিস্টেমের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে গত ১ নভেম্বর কর অঞ্চলগুলোকে চিঠি দিয়েছে এনবিআর। চিঠিতে বলা হয়, সরকারি কোষাগারে জমাদান ও রিপোর্টিংয়ের জন্য এনবিআর উদ্ভাবিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ই-টিডিএস সিস্টেম এরই মধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে উদ্ভাবিত এ স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমটি উৎসে কর কর্তনে আয়কর বিভাগ কর্তৃক নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নসহ আর্থিক শৃঙ্খলা জোরদারকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৬ অক্টোবর থেকে ই-টিডিএস যাত্রা শুরু করে। নতুন এ ব্যবস্থা চালুর ফলে উৎসে কর জমা দিতে করদাতা কোম্পানির প্রতিনিধিকে কর অফিসে যেতে হয় না। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কার্যালয় থেকেই অটোমেটেড চালানের (এ-চালান) মাধ্যমে উৎসে করের টাকা জমা করতে পারে।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত ই-টিডিএস নিবন্ধন নিয়েছে প্রায় তিন হাজার ৯০০ প্রতিষ্ঠান। যাতে মোট উৎসে কর আদায় হয়েছে প্রায় ২৭০ কোটি টাকা। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এনবিআর বিভিন্ন কর অঞ্চলে কোম্পানি করদাতাদের উদ্ধুদ্ধকরণসহ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর অঞ্চলসমূহ কর কর্মকর্তা ও করদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের উদ্ধুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর অঞ্চলভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, কয়েকটি ব্যাংক ই-টিডিএসের আওতায় এসেছে। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আরও ব্যাংক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ই-টিডিএসের আওতায় আসছে।
কর্মকর্তারা আরও জানান, কর অঞ্চল-১২ ই-টিডিএস কার্যক্রম বেগবান করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে তাদের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন করদাতা প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে ই-টিডিএস ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে, যাতে উদ্ধুদ্ধ হয়ে একটি স্বনামধন্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ই-টিডিএস ব্যবহার করে পাঁচ কোটি ৫৭ লাখ ৩২ হাজার ২৫৫ টাকা উৎসে কর দিয়েছে। কর অঞ্চল-১২-এর হিসাব অনুযায়ী, এ কর অঞ্চলে ৫৬টি প্রতিষ্ঠান ই-টিডিএস নিবন্ধন নিয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ই-টিডিএসের মাধ্যমে উৎসে কর জমা হয়েছে মোট পাঁচ কোটি ৯৬ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৭ টাকা।