Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:41 am

জনপ্রিয় হচ্ছে ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষ

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পদ্মবিলা এলাকায় মধুমতী নদীর বিল রুট ক্যানেলে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করে সফল হয়েছেন অনেক চাষি। তাই একে আরও সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নিচ্ছেন এলাকার বেকার যুবকরা। লাভজনক হওয়ায় নতুন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন মৎস্যজীবী ও শিক্ষিত বেকার যুবসম্প্রদায়। এ নদী দিয়ে মালবাহী নৌযান চলাচল করলেও মাছ চাষে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
জানা যায়, উলপুর ইউনিয়নের পদ্মবিলা ও মাদারীপুর বিল রুট ক্যানেল এলাকায় মূল নদীর বাঁকে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন তন্ময় ঠাকুর। প্রায় চার বছর আগে এখানে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার অধীনে বেশ কয়েকজন কাজ করছেন। পদ্মবিলা এলাকার বাসিন্দা নাজমুল সিকদার বলেন, তন্ময় ঠাকুর ২০১৪ সাল থেকে উলপুর ইউনিয়নের পদ্মবিলা এলাকায় মাদারীপুর বিল রুট ক্যানেলে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেছেন। ১৯৯৮ সালে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তন্ময়। এজন্য নিজের পুকুরে শুরু করেন মাছ চাষ। পরে পুকুরের বিকল্প হিসেবে নদীর দিকে ঝোঁকেন। এই ভাবনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তিনি চাঁদপুরে যান। সেখানে এই পদ্ধতির চাষ সম্পর্কে ধারণা নেন। ফেরার পথে আড়িয়াল খাঁ নদীতে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখতে পান। সেখান থেকেও পরামর্শ নেন। এরপর জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।
তন্ময় বলেন, প্রথমে বাঁশ ও জাল দিয়ে বড় খাঁচা তৈরি করতে হয়। খাঁচাগুলোকে পানিতে ভাসিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন মজবুত প্লাস্টিক ড্রাম। অনেকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য খাঁচা তৈরিতে লোহার পাইপ ব্যবহার করেন। একেকটি খাঁচার দৈর্ঘ্য ২০ ফুট, প্রস্থ ১০ ফুট। গভীরতা সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট। একটি সারিতে ৭৫টি খাঁচা রেখেছেন তন্ময়। একটি খাঁচা তৈরিতে প্রথম বছরে ব্যয় হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। পরের বছরে জাল পরিবর্তন, বাঁশ পরিবর্তন এসব মিলে খাঁচাপ্রতি খরচ হয় দুই হাজার টাকা।
খাঁচা পদ্ধতিতে শোল ও কার্পজাতীয় মাছ চাষ করা হয় না, কারণ এ ধরনের মাছ লাফিয়ে খাঁচা থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। পাঙ্গাশ, সরপুঁটি, তেলাপিয়া, মাগুর, কালিবাউশ প্রভৃতি মাছ বেশি চাষ হয়ে থাকে। নদীতে চাষ করায় এ মাছের স্বাদ তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই এসব মাছের চাহিদাও ভালো। তন্ময় বলেন, আমি সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ গ্রামের মাছ খাঁচায় দিই। প্রথম দিকে এই আকারের এক হাজার ৬০০ মাছ রাখা হয়। মাছের ওজন ২৫০ গ্রাম হলে প্রতি খাঁচায় ৮০০ থেকে এক হাজারটি রাখেন। ৫০০ গ্রাম ওজন হলে প্রতিটি খাচাঁয় দেওয়া হয় ২০০ থেকে ২৫০টি মাছ। বছর শেষে প্রতিটি মাছের ওজন ১.৭ কেজি থেকে দুই কেজি হয়। একটি খাঁচা থেকে বছর শেষে গড়ে ৪০০ কেজি মাছ তোলা হয়।
পুকুরে মাছ চাষ করলে প্রথম দিকে প্রতিটি মাছের ওজনের ২০ শতাংশ খাবার দেওয়া লাগে। কিন্তু নদীতে চাষ করলে প্রতিটি মাছের ওজনের ছয় থেকে সাত শতাংশ খাবার দিলেই চলে। মাছের ওজন বাড়তে থাকলে খাবার কম লাগে। শেষের দিকে এক শতাংশের চেয়েও কম লাগে। তবে এই বর্ষা মৌসুমে খাবার কম লাগে। মাছও তুলনামূলকভাবে কম বাড়ে, কারণ তখন নদীতে পলি থাকে। মাছের ফুলকায় পলি লেগে থাকায় মাছ খাবার বেশি খেতে পারে না, কিন্তু পুকুরের মাছ এর সম্পূর্ণ বিপরীত। পুকুরের মাছ বর্ষা মৌসুমে বেশি বাড়ে। নদীতে চাষ করা মাছের খাবার কম লাগার আর একটি কারণ নদীর পানিতে জোয়ার-ভাটা হয়। এর সঙ্গে অনেক ছোট খাবার (ছোট চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ) খাঁচার মধ্যে আসে, মাছ এগুলো খায়।
সানপুকুরিয়া এলাকার গৌতম রায় বলেন, আমরা আগামী বর্ষাকালে বিলে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য খাঁচা তৈরি করছি। এ পদ্ধতিতে লাভবান হওয়া সম্ভব। তাছাড়া জমির প্রয়োজন হয় না। লাভজনক হওয়ায় মাদারীপুর বিল রুট ক্যানেল নদীসহ উম্মুক্ত জলাশয়ে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ বিস্তার লাভ করছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, আমরা সার্বক্ষণিকভাবে চেষ্টা করি এ ধরনের মৎস্য চাষে উদ্বুদ্ধ করতে, যেন বেকার সমস্যা দূর করা যায়। তাছাড়া সরকারও মাছের পোনা ও খাবার কেনার জন্য ঋণ দিয়ে থাকে।

দুলাল বিশ্বাস