জনবল সংকটে ফেনী পাসপোর্ট অফিসে সেবা পেতে ভোগান্তি

কামরুল হাসান নিরব, ফেনী: জনবল সংকটে ফেনী পাসপোর্ট অফিসে সেবা পেতে ভোগান্তি শিকার হচ্ছেন  সেবাগ্রহীতারা। জনবল কম থাকায় প্রধান কর্মকর্তা এবং অধীনস্থ কর্মচারীদের কাজের ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি অফিস পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পাসপোর্ট অফিসে যে পরিমাণ জনবল নিয়োগের দরকার, সে পরিমাণ নিয়োগ নেই। এতে কাজের ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অফিস কর্মচারীদের। সরকারি বিধি মোতাবেক ১৪ জন জনবল নিয়োগের বিষয় থাকলে ফেনী পাসপোর্ট অফিসে লোকবল আছেন কর্মকর্তাসহ ১২ জন। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও সেবা পেতে ও দিতে উভয়ই বিলম্ব হতে হচ্ছে গ্রাহক ও কর্মচারীদের।

সম্প্রতি দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই পাসপোর্ট অফিসের জনবলের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেন। বস্তুত, জনবল কাঠামো ও সরকারি বিধি মোতাবেক ১৪ জন উল্লেখ থাকলেও এখানে লোকবল দরকার ছিল ২০ জনের অধিক। সাধারণ গ্রাহক কিংবা গ্রহীতারা প্রথমে ১০১ নম্বর রুমে প্রবেশ করতে হয় আবেদন স্বাক্ষরের জন্য। কিন্তু সেক্ষেত্রে কর্মচারী রয়েছে মাত্র দুজন। একজন কম্পিউটারে বসে কাগজপত্রের জটিলতা বের করেন। অন্যজন সব ঠিক থাকলে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে গ্রহীতা থাকে ২ অনুপাত ১০০ জন অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টা বা আধ ঘণ্টায় গ্রহীতা দাঁড়ায় ১০০ জন। এমনকি প্রতি মুহূর্তেই এ সিরিয়াল দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর হয়। এক্ষেত্রে আরও দুইজন কর্মচারী যোগ করে ৪ জন করা হলে গ্রাহক ভোগান্তি কমবে বলে পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়। আবার ফাইল ওকে করার পর ১০৩/১০৫ নম্বর রুমে ছবি, স্বাক্ষর এবং চোখের স্ক্যান করতে দাঁড়াতে হয়। সেখানেও ভিড় লেগে থাকে সবসময়।

ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাধন সাহা শেয়ার বিজকে জানান, সরকারি বিধি মোতাবেক জনবল নিয়োগ নেই আমাদের ফেনী অফিসে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের। অনেকেই এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও আমাদের কিছু করার থাকে না।

সরকারি বিধি মোতাবেক ১৪ জন পূর্ণাঙ্গ জনবল নিয়োগ হলে ঘাটতি কমবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী করতে গেলে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আবার সরকার তো একটি অফিসের জন্য আলাদাভাবে নিয়োগ দেবে না। সব অফিসের জন্য নিয়োগ প্রদানে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে। তবে বর্তমানে পাসপোর্টে গ্রাহক ভোগান্তি অর্থনৈতিকভাবে নেই। যেমন আগে সংশোধন কিংবা নবায়নের ক্ষেত্রে লক্ষাধিক টাকা দাবি করলেও বর্তমানে তা শিথিল হয়ে গেছে। দালাল চক্রের উৎপাত বর্তমানে নেই।

সাধন সাহা ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর পাল্টে গেছে চিত্র। জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম রোধে কঠোরভাবে দমন করেন তিনি। এতে করে বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ। পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতি কমায় স্বস্তি ফিরে জনমনে।

ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সহকারী পরিচালক সাধন সাহা গত বছরের অক্টোবর মাসে যোগদান করার পর পরই আবেদনকারীদের সমস্যা লাঘবে গ্রাহকদের মাত্রাতিরিক্ত অসন্তোষের বিষয় জানতে পেরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ ও গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধির পরামর্শ দেন তিনি। জনদুর্ভোগ লাঘব এবং রাজস্ব আদায়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠানটিকে একটি সুশৃঙ্খল, স্বচ্ছতা জবাবদিহির আওতায় আনতে কঠোর নির্দেশ দেন। তার কঠোর নির্দেশে কর্মচারীরা গ্রাহকদের সেবা প্রদানে দৃঢ় হন।

পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক আবেদনকারী জানান, অনলাইনে ফরম পূরণ করে সঠিক সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন। তাদের মতে, পাসপোর্ট করতে অনেক সময় ও সরকার নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে অধিক অর্থ গুনতে হয়। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদন করে অল্প সময়ে তারা পাসপোর্ট পেয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই অবাক হয়ে জানান, এ অফিসের কর্মকর্তাদের আচরণ এবং সেবার মান অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেও স্বচ্ছতা ফিরেছে।

তারা আরও জানান, জনবল কম থাকায় যেকোনো সমস্যা সমাধানে বর্তমান সহকারী পরিচালক পাসপোর্ট সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা টেবিলে টেবিলে ঘুরে নিজে সমাধান করে দিচ্ছেন।

দাগনভূঞা উপজেলার কোরাইশ মুন্সির হাটের নুর ইসলাম জানান, ১২ দিন আগে পাসপোর্ট আবেদন করেছেন। অনলাইনে ফরম পূরণ করে সঠিক সময়ের মধ্যেই পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন তিনি। পাসপোর্ট করতে নির্ধারিত ফি-এর বেশি টাকা ও লোক ধরতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সেদিন এখন আর নেই। সমস্যা হলে সোজা বড় কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যায়।

ফেনী নির্বাচন অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্ধারিত ফি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করে পাসপোর্ট অফিসে যাই। সেখানে গেলে অফিসপ্রধান পরিচয় জানতে পেরে নিজে এসে আমাকে সঙ্গে নিয়ে আবেদন জমাদানের বিভিন্ন কক্ষে যান এবং মুহূর্তে কাজ শেষ করেন।

জানা যায়, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর পাসপোর্ট অফিস হতে সরকারের আয় অনেক বেড়েছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু করে ৯ মাসে পাসপোর্ট জমা ৫৬ হাজার ৯৯১ জন আবেদনকারীর বিপরীতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। পাশাপাশি নিয়মিত আবেদনের বিপরীতে কোনো ধরনের সমস্যা ও হয়রানি ছাড়াই আবেদনকারীরা নিজ নিজ পাসপোর্ট পাচ্ছেন। লোকবল কম থাকার কারণে কিছু অসাধু কর্মচারী লোকজনদের হয়রানি করার চেষ্টা করত। বর্তমানে এ সমস্যা অনেকটাই লাঘব হয়েছে বলে জানা যায়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০