মফিজ জোয়ার্দার, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদশূন্য রয়েছে। সে সঙ্গে একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি অচল হয়ে পড়ে রয়েছে ২০০৭ সাল থেকে। দুটি এক্স-রে মেশিন থাকলেও একটি ২০০৪ এবং অন্যটি ২০০৯ সাল থেকে অকেজো হয়ে রয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৩৮টি পদশূন্য রয়েছে। অর্থাৎ ১৪৭ পদের বিপরীতে নিয়োজিত আছেন ১০৯ জন। আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার পদটিও শূন্য। গাইনি চিকিৎসক পদশূন্য থাকায় উপজেলার অধিকাংশ গাইনি রোগীদের যেতে হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট থাকলেও দুজনই সাময়িক আদেশে চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত। একইভাবে সার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্টের একমাত্র পদের চিকিৎসক প্রেষণে স্বাস্থ্য অধিদফতরে কর্মরত। একটি মেডিক্যাল অফিসার, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেস্থেশিয়া) পদ শূন্য রয়েছে। ডেন্টাল সার্জন দীর্ঘদিন অনুপস্থিত রয়েছেন। মেডিক্যাল টেকনোলজি (রেডিওগ্রাফার), যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ সহকারীসহ পিওন, আয়া ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদও শূন্য রয়েছে।
এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নয়ন খাত হতে পাওয়া মেরামতযোগ্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ২০০৭ সাল থেকে অচল হয়ে পড়ে আছে। একটি মেরামতযোগ্য পুরোনো ৫০ এমএ এক্স-রে মেশিন ২০০৪ সালের ১২ মার্চ এবং একটি নতুন ৩০০ এমএ এক্স-রে মেশিন ২০০৯ সালের ৭ নভেম্বর থেকে অচল পড়ে রয়েছে।
এছাড়া দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উপজেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে চিৎলা গ্রামে অবস্থিত। চার কিলোমিটারের এ রাস্তাটিও তেমন উন্নত নয়। খানাখন্দে ভরা এ রাস্তা দিয়ে কোনো রোগীকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে হলে সে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। চুয়াডাঙ্গা থেকে দামুড়হুদা, দর্শনা ও জীবননগর অতিক্রম করে যে প্রধান সড়কটি চলে গেছে তার আশপাশের অধিকাংশ দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামবাসীকে তাদের রোগী দামুড়হুদা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নেওয়ার চেয়ে ১০-১২ কিলোমিটার দূরের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন।
চিকিৎসা নিতে আসা আরামডাঙ্গা গ্রামের হেকমত আলী জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও এখানে আধুনিক চিকিৎসার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। পরীক্ষা প্রায় সবই করতে হয় বাইরে থেকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দামুড়হুদা সদরে কিংবা জেলা সদরে যেতে হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যদি জেলা শহরে যেতে হয় তাহলে চিকিৎসাও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে করা যেতে পারে। সে কারণে অনেকে রোগী নিয়ে এ হাসপাতালে না এসে সরাসরি নিয়ে যান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে।
উপজেলার চন্দ্রবাস গ্রামের আক্কাস মিয়া জানান, এখানে রয়েছে নানা সংকট। চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই। এ সুযোগে অনেক চিকিৎসক নামধারী গ্রাম্য ওষুধ বিক্রেতা নিজেরাই চিকিৎসক সেজে বসে সব রোগের চিকিৎসা দেন। এভাবে অপচিকিৎসার কারণে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী জানান, গুরুতর কোনো রোগীকে রেফার্ড করার প্রয়োজন হলে বিপাকে পড়তে হয় রোগীর লোকজনকে। এখানকার অ্যাম্বুলেন্সটি অচল থাকায় রোগীকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। এ জন্যও অনেক রোগী সরাসরিই চলে যান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল জানান, অ্যাম্বুলেন্স ও এক্স-রে মেশিনের ব্যাপারে প্রায়ই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয় না। ৩৮ শূন্য পদের ব্যাপারেও লেখা হয়েছে। ৩১ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন ৪০-৫০ জনের বেশি রোগী ভর্তি থাকে। আউটডোরে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ রোগী চিকিৎসা নেন। প্রধান সড়কের পাশের গ্রামগুলোর রোগীরা এখানে কম আসেন। তারা যান চুয়াডাঙ্গায়। সংকট দূর করে এখানকার সেবার মান বাড়ানো গেলে আরও বেশি মানুষকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 9:53 pm
জনবল সংকটে সেবা ব্যাহত
সারা বাংলা ♦ প্রকাশ: