জুম্মার নামাজের পর একটা দাওয়াত ছিল। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তা মনজুরুল দাওয়াতে না যেয়ে বাসায় চলে আসলো। নিজ বাসায় দুপুরের খাবার খেয়ে, খাটের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। ছোট ভাই জহির রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো।
জহিরঃ ভাইয়া, একটা পরামর্শ দাও।
মনজুরুলঃ কি পরামর্শ?
জহিরঃ আমি একটা জনমত জরিপ করতে চাচ্ছি?
মনজুরুলঃ সমস্যা তো নাই।
জহিরঃ আমি চাচ্ছি, উত্তরগুলো হবে আমার মনের মত। সেটা কি সম্ভব?
মনজুরুলঃ অবশ্যই সম্ভব।
জহিরঃ একটু বুঝিয়ে বলো।
মনজুরুলঃ তুই হরতালের পক্ষে নাকি বিপক্ষে?
জহিরঃ মনে কর, বিপক্ষে।
মনজুরুলঃ তাহলে তুই সার্ভে করার সময় প্রশ্ন করতে পারিস, আপনি কি মনে করেন দেশের অর্থনীতির জন্য হরতাল ক্ষতিকর? এই প্রশ্ন করলে, ১০০ জনের মধ্যে ১০০ জনই উত্তর দেবে, হরতাল ক্ষতিকর।
জহিরঃ যদি হরতালের পক্ষে রেজাল্ট চাই।
মনজুরুলঃ সেই ক্ষেত্রে, তোর প্রশ্ন হতে পারে, আপনি কি মনে করেন দাবি-দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে কখনো কখনো হরতাল প্রয়োজন? তখন দেখবি, সবাই হরতালের পক্ষে কথা বলবে।
জহিরঃ আরেকটা উদাহরণ দাও। বিষয়টা আরো পরিস্কার করে বুঝে নেই।
মনজুরুলঃ এই যে করোনা, এত মানুষের প্রাণ নিচ্ছে। কেউ কি করোনার পক্ষে আছে?
জহিরঃ প্রশ্নই আসে না।
মনজুরুলঃ এখন যদি ৫০০ জন মানুষকে প্রশ্ন করা হয়, করোনার কারণে আমাদের মধ্যে কি সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছে? সবাই কিন্তু হ্যাঁ সূচক উত্তর দেবে। তার মানে হচ্ছে, প্রশ্নের উপর ভিত্তি করে করোনার পক্ষেও ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
জহিরঃ তুমি তো দারুন বলেছো। আমার প্রশ্নের মধ্যেই তো অনেকটা বাধ্যতামূলক উত্তর থাকছে। আমি যেমন চাচ্ছি, তেমন উত্তর পাবো।
মনজুরুলঃ তারপর ঘোষণা দেয়া হয়, জনমত জরিপের ফলাফল।
জহিরঃ এরকম পক্ষপাতমূলক প্রশ্ন করা কি ঠিক?
মনজুরুলঃ আদৌ ঠিক না। এটা নির্ভর করে, যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জরিপ করছে, তাদের উপর। তারা চাইলেই, নিরপেক্ষ ভাবে কাজটা করতে পারে। সেই ক্ষেত্রে জনমত জরিপের ফলাফল অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়। যাই হোক, তুই কি তোর উত্তর পেয়েছিস?
জহিরঃ হুম, পেয়েছি।মনজুরুলঃ তাহলে তোর রুমে যা। যাবার সময় এসি বাড়িয়ে দিস। আমি একটু ঘুমাবো।
লেখক-রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক