‘জনশুমারিতে তথ্য দিন, পরিকল্পিত উন্নয়নে অংশ নিন’ স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয়েছে জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২। ১৫ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত ‘শুমারি সপ্তাহ’ হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। দেশে এটি ষষ্ঠ জনশুমারি হলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই প্রথম গণনা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ করছে। দেশের বর্তমান মোট জনসংখ্যা, জš§-মৃত্যু, শিক্ষা, বেকারত্বের হারসহ নানা তথ্যের প্রয়োজনে সরকার প্রতি ১০ বছর অন্তর এ কাজটি করে থাকে। বাংলাদেশে প্রথম জনশুমারি হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। সর্বশেষ জনশুমারি হয়েছে ২০১১ সালে। সেই হিসাবে পরবর্তী শুমারি ২০২১ সালে হওয়ার কথা থাকলেও করোনার প্রভাবে সেটি সম্ভব হয়নি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সরকার সাধারণ জনগণ এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নের চিন্তা করে এ জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজটি শুরু করেছে। এ কার্যক্রমের আওতায় দেশের শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সব এলাকায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহকারীরা ৩৫টি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ট্যাবে ফরম পূরণ করবেন। এতে দেখা যাবে, একজন মানুষ তার ফরম পূরণ করার জন্য গণনাকারীকে বিভিন্ন তথ্যে দিচ্ছেন। এসব তথ্যের মধ্যে বেশকিছু ব্যক্তিগত বিষয়ও সেখানে দেয়া লাগছে, যা তার একান্তই ব্যক্তিগত। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এই গণনাকারীকে এসব ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। কোনোভাবেই যেন এসব তথ্য অন্যের হাতে গিয়ে বিশৃঙ্খলার জš§ না দেয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
জনশুমারি একটি দেশের জনসংখ্যার সরকারি গণনা হিসেবে গণ্য করা হয়। জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ে একটি জনগোষ্ঠীর বা দেশের জনসংখ্যা গণনার সামগ্রিক প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ, তথ্য একত্রীকরণ এবং জনমিতিতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক তথ্যাদি প্রকাশ করাকে জনশুমারি বলা হয়। জনসংখ্যা গণনার সুবিধার্থেই মূলত জনশুমারি করা হয়ে থাকে। তবে এর পাশাপাশি জনশুমারির ফলে সাধারণ মানুষের মৌলিক জনমিতিক, আর্থ-সামাজিক ও বাসগৃহ-সংক্রান্ত উন্নয়নে সরকার পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে পারে। এছাড়া ভোটার তালিকা তৈরির কাজেও জনশুমারি অন্যতম ভূমিকা রাখে। আগের পাঁচটি জনশুমারি খাতা কলমে জরিপ করা হলেও এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে আয়োজন করায় এ কাজে অন্যবারের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। ১৫ জুন থেকে শুরু হওয়া এ জনশুমারি ও গৃহগণনায় মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে। এ পরিসংখ্যানে
বিদেশে অবস্থানরত প্রায় ১ কোটির মতো প্রবাসী এবং বাংলাদেশে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থানকারী বিদেশিদেরও গণনা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অন্যবারের তুলনায় এবারের জনশুমারিতে বেশকিছু নতুনত্ব আনা হয়েছে। যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে তার মধ্যে থেকে একজন ব্যক্তির সম্পদ, খাদ্যাভ্যাসসহ জীবনযাত্রার নানা তথ্য রয়েছে। পাশাপাশি পরিবারের অনন্য সদস্য এবং নিকটাত্মীয়দের তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এজন্য এসব তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যদিও আইনের খসড়ার ৯ (৪) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর শাস্তির বিধানের কথা। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গণনাকারীরা আরও বেশি সচেতনতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে বলে আশা রাখা যাচ্ছে। পাশাপাশি এসব তথ্য গোপন রাখতে এবং পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণের জন্য সরকারকে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি নিশ্চিত করাসহ আইনের সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
রিয়াদ হোসেন
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ
খুলনা