জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত জনশুমারি ও গৃহ গণনার পোস্ট এনুমারেশন চেক বা জনগণনা-পরবর্তী যাচাই (পিইসি) কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে রাষ্ট্রীয় গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। এতে জানানো হয়, জনশুমারিতে আদর্শ বিচ্যুতি ঘটেছে দুই দশমিক ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ, দেশের এই সংখ্যক জনগণ গণনার বাইরে থেকে গেছেন। কিন্তু সেই আদর্শ বিচ্যুতি সমন্বয় করলে মোট জনসংখ্যা কত দাঁড়ায়, সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনো হিসাব দেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে দেখানো হয়েছে আইনের দোহাই। অবশেষে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমের নির্দেশে জানানো হয়েছে যে, আদর্শ বিচ্যুতি সমন্বয় করা হলে দেশের মোট জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। কিন্তু এর মধ্যে নারী কত জন, পুরুষ কত জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের কত জন সেসব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনো তালিকা দেয়া হয়নি। এহেন কার্মকাণ্ডে অনেকটা বিরক্তি প্রকাশ করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল পিইসির ফল প্রকাশ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিআইডিএস। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিইসি কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত গবেষক বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মোহাম্মদ ইউনুস।

ড. ইউনুস তার বক্তব্যে পিইসি কার্যক্রমের নানা কারিগরি বিষয় তুলে ধরেন। এমসয় প্রতিমন্ত্রী কারিগরি বিষয়ের পরিবর্তে পিইসি কার্যক্রমের ফলাফল জানার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রতিমন্ত্রী আদর্শ বিচ্যুতি সমন্বয়ের পর দেশের মোট জনসংখ্যা কত দাঁড়িয়েছে, সেটির পাশাপাশি জনসংখ্যার মৌলিক কিছু বৈশিষ্ট্য জানাতে তাগিদ দেন। এসব মৌলিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক জনসংখ্যার ধরন, নারী-পুরুষের অনুপাত, বিভিন্ন বিভাগভিত্তিক জনসংখ্যা বৈশিষ্ট্য প্রভৃতি। কিন্তু এসব বিষয়ে অনুষ্ঠানে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও বিবিএসের কর্মকর্তারা জানান, এই অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রীর জিজ্ঞাসিত বিষয়গুলো জানানোর ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। তারা উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালে প্রণীত পরিসংখ্যান আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় কোনো উপাত্ত জনসম্মুখে বা সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও অন্যান্য অংশীজনদের জানানোর একমাত্র এখতিয়ার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)। সে কারণে এই অনুষ্ঠানে বিস্তারিত জানানো সম্ভব নয়। পরে বিবিএস এ বিষয়ে গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অবহিত করবে বলে বিআইডিএসের মহাপরিচালক উল্লেখ করেন। এ পর্যায়ে সাংবাদিকরাও সমন্বয়ের পর মোট জনসংখ্যা কত হলো সে বিষয়ে জানার জন্য প্রশ্ন করেন। তখন প্রতিমন্ত্রী নিজ দায়িত্বে বিবিএস কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জেনে নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান যে, আদর্শ বিচ্যুতি সমন্বয়ের পর দেশের মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন।

গত বছরের জুনে জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জুলাই মাসের শেষ দিকে শুমারির প্রাথমিক হিসাব প্রকাশ করে বিবিএস। তাতে জানানো হয়, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন।

বিবিএসের শুমারিতে কতসংখ্যক বাদ পড়েছে, তা জানতে আলাদাভাবে যাচাই-বাছাই করে বিআইডিএস। তাতে দেখা যায়, বিবিএসের শুমারিতে ৪৭ লাখ বাদ পড়েছে। নতুন করে তারা যোগ হওয়ায় এখন জনসংখ্যা বেড়ে ১৬ কোটি ৯৮ লাখে উন্নীত হয়েছে। বিআইডিএস বলেছে, বিবিএসের শুমারিতে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষ বাদ পড়েছে।

বিআইডিএসের বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে সিটি করপোরেশন এলাকার মানুষ। গ্রামের মানুষ বাদ পড়েছে সবচেয়ে কম। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী গ্রামে ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ জনশুমারির হিসাব থেকে বাদ পড়েছে। আর শহরে বাদ পড়েছে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। নারী-পুরুষের শুধু আনুপাতিক হিসাব প্রকাশ করে গবেষণা সংস্থাটি বলছে, নারীদের চেয়ে পুরুষ বাদ পড়েছে বেশি। নারীদের বাদ পড়ার হার ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ, আর পুরুষ বাদ পড়েছে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

বয়সের বিচারে জনশুমারির হিসাবের সময় সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। গবেষণায় চূড়ান্ত হিসাবে দেখা যায়, গণনার খাতায় সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সীরা। এই বয়সভিত্তিক গোষ্ঠীর মধ্যে বাদ পড়েছে মাত্র ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। গণনায় সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে ৭৫ বা তার বেশি বয়সীরা। তাদের বাদ পড়ার হার ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এরপরই বাদ পড়ার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে শূন্য থেকে চার বছর বয়সী শিশুরা। তাদের মধ্যে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশই হিসাবে আসেনি বলে জানানো হয়েছে।

বিভাগের হিসাবে জনশুমারির গণনায় যারা সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে তাদের তালিকায় রয়েছে সিলেট বিভাগের মানুষ। এ বিভাগে আদর্শ বিচ্যুতির অনুপাত ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। জুনে জনশুমারি চলাকালে সিলেট অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। ফলে ওই এলাকায় জনশুমারির সময় এক সপ্তাহ বাড়ানো হলেও অনেক মানুষ হিসাবে আসেনি। অন্যদিকে ময়মনসিংহ এলাকার মানুষ বাদ পড়া মানুষের তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে। এ বিভাগে ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ মানুষ বাদ পড়েছে। গণনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ। এ অঞ্চলে বাদ পড়েছে ২ দশমিক ১২ শতাংশ মানুষ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০