জনস্বাস্থ্য ও টেকসই উন্নয়নে তামাকে কর বাড়ানোর সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়নে আগামী বাজেটে তামাকের ওপর কর বাড়ানোর সুপারিশ করেছে তামাকবিরোধী সংগঠন। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘কেমন তামাক কর চাই’ শীর্ষক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশ করা হয়। প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স-আত্মার উদ্যোগে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), ইয়ং পাওয়ার ইন সোস্যাল অ্যাকশন (ইপসা) এবং তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) সম্মিলিতভাবে এর আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক পণ্যে করারোপের ক্ষেত্রে রাজস্ব নয় বরং জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে তামাক পণ্যের দাম অনেক বেশি। সুতরাং কর বাড়ালে সিগারেটের চোরাচালান বৃদ্ধির যে যুক্তি তামাক কোম্পানিগুলো দিচ্ছে তা সম্পূর্ণ অমূলক।
জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে হলে করারোপের মাধ্যমে তামাক পণ্যের দাম বাড়িয়ে এর ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে তামাক পণ্যের দাম সস্তা এবং তা দিন দিন আরও সস্তা হচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যমান তামাক কর-কাঠামো অত্যন্ত জটিল হওয়ায় কর ফাঁকির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে তামাক পণ্যের ধরন ও ব্র্যান্ড ভেদে ব্যাপক মূল্য পার্থক্য থাকায় ভোক্তা তুলনামূলক সস্তা তামাকপণ্য ক্রয় করতে পারছে। যা তামাক করের কার্যকারিতা হ্রাস করছে।
আগামী বাজেটে সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা দুটিতে (নি¤œ এবং উচ্চ) নামিয়ে আনা, নি¤œস্তরের সিগারেটে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভাজন তুলে দেওয়া এবং উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরকে একত্রিত করে একটি মূল্যস্তরে (উচ্চস্তর) নিয়ে আসা, নি¤œস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের সর্বনি¤œ মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং উচ্চস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের সর্বনি¤œ মূল্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কারোপ করা, সব ক্ষেত্রে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটে পাঁচ টাকা সুনির্দিষ্ট করারোপ করা, ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার বিভাজন বাতিল করে প্রতি ২৫ শলাকা বিড়ির সর্বনি¤œ মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ, বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার বিভাজন বাতিল করা, প্রতি ২৫ শলাকা বিড়ির সর্বনি¤œ মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ছয় টাকা সুনির্দিষ্ট করারোপ করা, ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের (জর্দা ও গুল) এক্স-ফ্যাক্টরি প্রাইস প্রথা বিলুপ্ত করা, এক্স-ফ্যাক্টরি প্রাইস প্রথা বিলুপ্ত করে সিগারেট ও বিড়ির ন্যায় খুচরা মূল্যের ভিত্তিতে করারোপ করা, প্রতি ২০ গ্রাম ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের সর্বনি¤œ মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১০ টাকা সুনির্দিষ্ট করারোপ করা, সব তামাক পণ্যের খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাটারোপের প্রস্তাব করা হয়।
আরও বলা হয়, বাজেটে প্রস্তাবসমূহ গ্রহণ করা হলে প্রায় ছয় দশমিক ৪২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দেবে, সিগারেটের ব্যবহার দুই দশমিক সাত শতাংশ এবং বিড়ির ব্যবহার দুই দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস পাবে। দীর্ঘমেয়াদে দুই দশমিক এক মিলিয়ন বর্তমান ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং ৭৫ থেকে ১০০ বিলিয়ন টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে।
এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে তামাক পণ্যের ওপর করারোপে অ্যাড ভ্যালোরেম প্রথার পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স পদ্ধতির প্রচলন, তামাক কর ব্যবস্থা সহজ করতে পর্যায়ক্রমে সব তামাকপণ্য অভিন্ন পরিমাণে করারোপ, আয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স নিয়মিত বৃদ্ধি করা, সহজ এবং কার্যকরী তামাক কর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, সব ই-সিগারেট এবং হিট-নট-বার্ন (আইকিউওএস) তামাক পণ্যের উৎপাদন, আমদানি এবং বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় অর্থায়ন করার সুপারিশ করা হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০