সব বয়সেই ছানি দেখা দিতে পারে। যদিও সাধারণত এটি বয়স্কদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা দেয়। জন্মের সময় অনেক শিশুই চোখে ছানি নিয়ে জন্ম নিতে পারে। এটিকে বলা হয় কনজেনিটাল ক্যাটারাক্ট বা জন্মগত ছানি। শিশুদের ছানি পড়ার কারণগুলো বয়স্কদের থেকে একটু ভিন্ন।
জন্মগত ছানি বয়স্কদের ছানি থেকে একটু ভিন্ন মাত্রার। বয়স্কদের ছানি হলে দেখার কাজটি বিঘ্নিত হয় ও সমস্যাটি সাময়িক। অস্ত্রোপচার করে লেন্স প্রতিস্থাপন করলে সমস্যাটি কেটে যায়। শিশুদের ছানি একটি জটিল বিষয়। কারণ, জন্মের সময় একটি শিশু আংশিক দৃষ্টি নিয়ে জন্মায় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি পরিপক্বতা লাভ করে। এতে পাঁচ-ছয় বছর সময় লেগে থাকে। এ সময়ে যদি শিশুদের চোখে ছানি থাকে, তবে দৃষ্টি পরিপক্বতা লাভে ব্যর্থ হয়।
জন্মগত ছানি শনাক্তকরণে কয়েকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন শিশু কোনো কিছুর দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করে কি না; আলোর দিকে তাকায় কি না; খেলনা প্রভৃতি ধরার চেষ্টা করে কি না; চোখে ট্যারাভাব আছে কি না; নিসটেগমাস বা চোখে কাঁপুনি আছে কি না প্রভৃতি। ট্যারাভাব ও নিসটেগমাস বা চোখে কাঁপুনি থাকলে এটি খারাপ লক্ষণ।
ছানির একমাত্র চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার। প্রাথমিক অবস্থায় লেন্স অপসারণ ও পরবর্তী সময়ে কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন। অনেক সময় প্রথমবারেই কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা যায়। এটি নির্ভর করে অস্ত্রোপচারের সময় শিশুর বয়স এবং এক চোখে না দুই চোখে ছানি তার ওপর। কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করলে অথবা না করলেও চশমার প্রয়োজন হবে।
জন্মগত ছানির ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পরে দীর্ঘ মেয়াদে বিষয়টি বয়স্কদের মতো জটিলতাবিহীন নয়। দীর্ঘমেয়াদে জটিলতার মধ্যে গ্লুকোমা ও রেটিনাল ডিটাচমেন্ট অন্যতম।
জন্মগত ছানি মানে সারা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দৃষ্টি। তাই ছানি হলে যেমন তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি, তেমনি ছানি যাতে না হয়, অর্থাৎ জন্মগত ছানি প্রতিরোধও তেমনি জরুরি। কোন শিশু ছানি নিয়ে জন্মাবে, আগে থেকে সেটি জানা না গেলেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে অনেক সময় এটি দূর করা সম্ভব। সেটি হলো গর্ভকালীন মায়ের স্বাস্থ্য পরিচর্যা।
ডা. মো. ছায়েদুল হক
সাবেক সহযোগী অধ্যাপক
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল