শোবিজ ডেস্ক: তার আগের নাম সুমন চট্টোপাধ্যায়। ২০০০ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আগের নাম পরিত্যাগ করেন। এখন তিনি কবীর সুমন নামে পরিচিত। তিনি ১৯৫০ সালের ১৬ মার্চ ভারতে জন্ম গ্রহণ করেন।
ছেলেবেলা থেকেই পারিবারিক আবহে গান শেখার শুরু। ১৯৯২ সালে নিজের লেখা, সুর করা ও গাওয়া ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি বাংলা গানে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন এবং এর মাধ্যমেই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন ও জনপ্রিয়তা পান।
কবীর সুমন মূলত আধুনিক বাংলা গানের শিল্পী। এছাড়া তার অন্য পরিচয়গুলো হচ্ছে গীতিকার, সুরকার, গিটারিস্ট, অভিনেতা, বেতার সাংবাদিক, গদ্যকার, রাজনীতিক ও সমাজকর্মী। কবীর সুমন নিজের লেখা গানের পাশাপাশি রবীন্দ্রসংগীত ও পুরোনো বাংলা গান গেয়ে থাকেন। রবীন্দ্রসংগীতের বেশ কয়েকটি অ্যালবামও রয়েছে তার। তার স্বরচিত গানের অ্যালবামের সংখ্যা পনেরো। সংগীত রচনা, সুরারোপ, সংগীতায়োজন ও কণ্ঠদানের পাশাপাশি গদ্যরচনা ও অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তিনি স্বকীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি একাধিক প্রবন্ধ, উপন্যাস ও ছোটোগল্পের রচয়িতা এবং ‘হারবার্ট’ ও ‘চতুরঙ্গ’ প্রভৃতি মননশীল ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের রূপদান করেছেন। বিশিষ্ট বাংলাদেশি গায়িকা সাবিনা ইয়াসমিন তার বর্তমান সহধর্মিণী। সংগীতে তার প্রাথমিক শিক্ষা মূলত ভারতীয় ক্লাসিক্যাল মিউজিক ও রবীন্দ্রসংগীতের ওপর। তিনি ওয়েস্টার্ন মিউজিকের ভাবধারা আত্মস্থ করেন দেশের বাইরে থাকার সময়। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ব্রডকাস্ট সাংবাদিক হিসেবে তিনি জার্মানিতে থাকেন। সেখানে তিনি জার্মান ইন্টারন্যাশনাল রেডিওতে কাজ করেন। এছাড়া তিনি ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সার্ভিসে কাজ করেন। ১৯৮৯ সালে জার্মান ইন্টারন্যাশনাল রেডিও’র সাথে দ্বিতীয় চুক্তির মেয়াদ শেষে ১৯৮৯ কলকাতায় ফিরে আসেন তিনি।
কবীর সুমনের গানে বাংলা আধুনিক, ওয়েস্টার্ন ফোক ও প্রতিবাদী সংগীতের সম্মিলিত মূর্ছনা স্পষ্ট। বাংলা গানের উন্নয়নে তার রয়েছে অপরিসীম অবদান। অনেকের মতে, তার প্রচলিত ধারার মাধ্যমে বর্তমানের বাংলা গান ছন্দে ফিরেছে বেশ খানিকটা। চন্দ্রবিন্দুর মতো ব্যান্ডগুলোও তার ধারায় প্রভাবিত। আসলেই তিনি বাংলা গানে এক ভিন্নধর্মী গতির সঞ্চার করেছেন। বাংলা গানের ক্ষেত্রে জীবনমুখী গানের বিশেষ ধারাটা সৃষ্টিতে সুমনের অবদান অনবদ্য। তাকে নাগরিক কবিয়াল নামেও ডাকা হয়। সুমন নিজে অবশ্য বব ডিলান দ্বারা প্রভাবিত। ডিলানের প্রভাব তার প্রথম দিককার অ্যালবামগুলোতে বিশেষ করে অ্যালবামগুলোর সংগীতায়োজনে ও যন্ত্রানুষঙ্গে পরিলক্ষিত হয়। নচিকেতা, অঞ্জন দত্ত, লোপামুদ্রা মিত্রের মত বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান গায়ক কাম গীতিকারের ওপর সুমনের প্রভাব বেশ লক্ষ্যণীয়।
নন্দীগ্রাম গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষিজমি রক্ষার ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন এবং সেই সূত্রে সক্রিয় রাজনীতিতে তার আগমন। ২০০৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দেশের পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ও জয়লাভ করে ওই কেন্দ্র থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কবীর সুমনের উল্লেখযোগ্য অ্যালবাম: ‘তোমাকে চাই’, ‘গানওলা’, ‘চাইছি তোমার বন্ধুতা’, ‘জাতিস্মর’, ‘নিষিদ্ধ ইস্তেহার’ ও ‘নাগরিক কবিয়াল’।
উল্লেখযোগ্য গান: ‘তোমাকে চাই’, ‘অমরত্বের প্রত্যাশা নেই’, ‘আমি নাগরিক কবিয়াল’, ‘আমি চাই সাঁওতাল তার ভাষায় বলবে রাষ্ট্রপুঞ্জে’, ‘ও গানওলা আরেকটা গান গাও’, ‘যদি ভাবো কিনছ আমায়’, ‘বাশরিয়া বাজাও বাঁশি দেখি না তোমায়’, ‘কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়’(বব ডিলানের ‘ইষড়রিহম রহ ঃযব রিহফ’ অবলম্বনে লেখা), ‘কখনো সময় আসে’, ‘ক্যাকটাস তুমি কেঁদো না’ ‘হঠাৎ রাস্তায় অফিস অঞ্চলে’, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’ ‘যদি ভাবো কিনছো আমায়’।
Add Comment