উপমহাদেশের প্রখ্যাত নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ফিরোজা বেগমের ৮৮তম জন্মদিনে ছিল নানা আয়োজন। তার জন্মদিনের প্রথম প্রহরেই চমকে দিল বিশ্বের প্রধান সার্চ ইঞ্জিন গুগল। উপহার হিসেবে গুগল তাদের লোগোতে স্থান দিয়েছে ফিরোজা বেগমের প্রতিকৃতি।
গতকাল শনিবার সকাল থেকেই গুগলের হোমপেজে শোভা পাচ্ছে ফিরোজা বেগমকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো ডুডলটি। এখানে দেখা যাচ্ছে, মাইক্রোফোনের সামনে চোখ বন্ধ করে গান গাইছেন ফিরোজা বেগম। তার পরনে শাড়ি, গলায় বড় মালা। আর চুলে দেখা গেছে বড় খোপা।
ফরিদপুরের এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন ফিরোজা বেগম। তার বাবা খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের প্রথম মুসলমান সরকারি কৌঁসুলি। মাতা বেগম কওকাবুন্নেসা। উপমহাদেশীয় সংগীতের অন্যতম পুরোধা ছিলেন ফিরোজা বেগম। সংগীতের সব শাখাতেই ছিল তার দৃপ্ত পদচারণা। তবে নজরুলসংগীতে নিজেকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। ফিরোজা বেগম ১৯৪২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কলকাতায় নিয়মিত গান করেছেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে ফিরোজা বেগম কাজী নজরুলের সান্নিধ্যে আসেন এবং তার কাছ থেকে তালিম গ্রহণ করেন। এইচএমভি থেকে তার প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪২ সালের ডিসেম্বরে। নজরুলের গান নিয়ে প্রকাশিত তার প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। আধুনিক গান, রবীন্দ্রসংগীত, গজল, ভজন সব গানই তখন করেছেন। ১৯৫১ সালে কলকাতায় কমল দাশগুপ্তের সুরে বেশকিছু গান করেন। এভাবেই তার সংগীত গুরু হয়ে ওঠেন কমল দাশগুপ্ত। তিনি নজরুলের কথার সুর দিতেন, আর ফিরোজা বেগম সেগুলো কণ্ঠে তুলে নিতেন। ১৯৫৬ সালে কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন ফিরোজা বেগম। তবে ১৯৭৪ সালে স্বামীর মৃত্যু ও দেশভাগের সময় অনেক ঘাত-প্রতিঘাত আর সংগ্রামের ভেতর দিয়ে ফিরোজা বেগম হয়ে যান নজরুলসংগীত সম্রাজ্ঞী। ফিরোজা বেগম স্বাধীনতা পুরস্কার, শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ টিভি শিল্পী পুরস্কার (পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, স্যার সলিমুল্লাহ স্বর্ণপদক, দীননাথ সেন স্বর্ণপদক, সত্যজিৎ রায় স্বর্ণপদকসহ আরও অনেক পুরস্কারে ভ‚ষিত হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১২ সালে তাকে বিশেষ নজরুল সম্মাননা দেয়। ফিরোজা বেগমের দুই ছেলে হামিন আহমেদ ও শাফিন আহমেদ দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তার আরেক পুত্র তাহসিন, ক্যারিয়ার গড়েছেন গানের বাইরে। ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ফিরোজা বেগম। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সাল থেকে ফিরোজা বেগমের জন্মদিন উপলক্ষে প্রদান করা হয় ‘ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক’। দেশের সংগীতের দুই দিকপাল সাবিনা ইয়াসমিন (২০১৬) ও রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার (২০১৭) পর এবার ‘ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক’ পাচ্ছেন রুনা লায়লা। আগামীকাল সোমবার বেলা ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশের জনপ্রিয় এ সংগীতশিল্পীর হাতে সম্মাননা তুলে দেবেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের বিএ সম্মান পরীক্ষায় এবার সর্বোচ্চ সিজিএ পাওয়া শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ‘ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ স্বর্ণপদক দেওয়া হবে।
