জবাবদিহি নিশ্চিত করে ভুলের পুনরাবৃত্তি থামান

গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ ডাবল লাইন: ভুলে ভরা নির্মাণ পরিকল্পনা, অনুমোদনহীন স্টেশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের ভুল সংশোধনে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ৬৭ শতাংশ। আর ডাবল লাইন হচ্ছে না চাষাঢ়া-নারায়ণগঞ্জ স্টেশন অংশটি।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হয় ২০১৫ সালে। সাত বছর পেরোলেও মাত্র ১২ কিলোমিটার রেলপথে ডাবল লাইন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়নি। এরই মধ্যে প্রকল্পটিতে ধরা পড়ে নানা ধরনের অসংগতি। এসব ত্রুটি সংশোধনে প্রকল্প পরিকল্পনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হয়। প্রকল্পটিতে বাড়তি কোনো অর্থ দিতে রাজি নয় অর্থায়নকারী জাপান সরকার। ফলে ব্যয় বৃদ্ধির পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে বহন করতে হবে।

রেলের প্রকল্পে বারবার ব্যয় বৃদ্ধি রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ লোপাট হয় বলেই সাধারণ মানুষের ধারণা। রেল কর্তৃপক্ষের ভুলের মাশুল দিতে হয় রাষ্ট্রকে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ ডাবল লাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বাড়লেও অতিরিক্ত ব্যয় হবে। বিদ্যমান মিটারগেজ সিঙ্গেল লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের জন্য এবং রূপান্তরের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিগনালিং কাজের বিশদ ডিজাইন, দরপত্র প্রক্রিয়া, নির্মাণকাজের তদারকিসহ নতুন পরামর্শক প্যাকেজ প্রস্তাব করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এটি দুঃখজনক। এ আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অসহযোগিতায় রেলপথটি ডাবল লাইন করার কাজ শুরু করা যায়নি।

বলা হয়ে থাকে, বিনা টিকিটের যাত্রীর কারণে রেল কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশিত আয় করতে পারছে না। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ রুটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী চলাচল করেন। ট্রেন সংখ্যা বেশি হলে নাগরিকরা যেমন উপকৃত হতেন, তেমনি রেলের আয়ও বাড়ত। ডাবল লাইন হলে সাধারণ মানুষ নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে রাজধানীতে অফিস করতে পারবেন, শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়া করতে পারবেন সহজে। তখন এ রুটে যাত্রী সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়বে।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ ডাবল লাইন নির্মাণের খবরে আশান্বিত হয়েছেন এ অঞ্চলের জনসাধারণ। কিন্তু সেখানেও ভুল। ফলে কবে নাগাদ রেলপথ নির্মাণ করা হবে এবং সাধারণ মানুষ সুফল পাবে; তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে। সরকার রেলওয়েকে আধুনিক, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও যাত্রী সেবামূলক গণপরিবহন হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি, চুরি ও অব্যবস্থাপনায় রেল প্রত্যাশিতভাবে এগোতে পারছে না। এর আগেও অনিয়ম দুর্নীতির কারণে রেল বেকায়দায় পড়েছে; যাত্রীদেরও দুর্ভোগ বেড়েছে। বিপুল বরাদ্দ ও রাষ্ট্রের আনুকূল্য পেয়েও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবে রেল লাভজনক হয়ে উঠছে না। আমরা আশা করি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় বন্ধ করা হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করলে ভুলের পুনরাবৃত্তি থামানো সম্ভব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০