Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 11:47 pm

জবির আইসিটি সেল: উদ্যোগ, অব্যবস্থাপনা আর আশ্বাসের এক দশক

প্রতিনিধি, জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) এ ২০১২ সালে ১০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ নিয়ে যাত্রা শুরু করে নেটওয়ার্কিং এন্ড আইটি দপ্তর। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে শক্তিশালী ইন্টারনেট সেবা এবং ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতেই প্রতিষ্ঠা করা হয় দপ্তরটি। 

পরবর্তীতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সুপারিশের প্রেক্ষিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেওয়ার্কিং এন্ড আইটি দপ্তর ও আইসিটি সেল-কে একত্রিত করে ‘আইসিটি সেল’ নামকরণ করা হয়। যা ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩ তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হয়।
প্রতিষ্ঠার এক দশকে বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর জন্য ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্কিংভিত্তিক নানান উদ্যোগ নেয় দপ্তরটি৷ যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নিজস্ব কারিগরি সহায়তায় ভর্তি, সফটওয়্যার তৈরী, নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণসহ বেশকিছু উদ্যোগ। 
তবে এসব উদ্যোগের পাশাপাশি অব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয়হীনতা ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। ফলে বিভিন্ন সেবার সাথে ছিল ভোগান্তিও ।
জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ১০ এমবিপিএস থেকে বৃদ্ধি করে ৭০০ এমবিপিএস এ উন্নীত করা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট এর স্পীড নিয়ে শিক্ষার্থীদের রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ। নামমাত্র ইন্টারনেট সংযোগ,ধীরগতি এবং যখন তখন ইন্টারনেট সংযোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ইন্টারনেট শুধু ডিভাইসে সংযোগ হবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের৷
আইসিটি সেলের অধীনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব প্রযুক্তিতে একটি ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে এবং প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। তবে ডায়নামিক ওয়েবসাইটের কথা বলা হলেও সেখানে আপডেট তথ্য নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের। নেই সকল শিক্ষকদের ছবিসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য।
অপরদিকে আইসিটি সেলের অধীনে ৬৭টি আইপি ফোন মনিটরিং ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করার নিমিত্তে আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান মনিটরিং করা হচ্ছে।
তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষার আবেদন ও অ্যাডমিশন ফি সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেনের তথ্য সম্বলিত ওয়েবসাইটে (student.erp.jnu.ac.bd [1]) কপিরাইট লঙ্ঘনসহ মেয়াদোত্তীর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।  অপরদিকে এই ওয়েবসাইটেই শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট দেখার অপশন থাকলেও সেটি কার্যকর নয়। 
এদিকে আইসিটি সেলের অধীনেই অটোমেশন পদ্ধতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাব বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছে। ফলে বেতন ও অন্যান্য হিসাবের তথ্য দ্রুত পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্যালারি পেমেন্ট স্টেটমেন্ট, লোন ম্যানেজমেন্ট, জিপিএফ ম্যানেজমেন্ট, ক্যাশ ব্যালেন্সিং এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কার্যাবলি এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা যাচ্ছে।
তবে শিক্ষার্থীদের আর্থিক লেনদেনের তথ্য সম্বলিত  (student.erp.jnu.ac.bd [1]) ওয়েবসাইটের সার্ভার সেমিস্টার ভর্তি ফি প্রদান কিংবা সেমিস্টার পরীক্ষা ফি দেওয়ার মৌসুমে ডাউন হয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের কিছুটা ভোগান্তিতেও পড়তে হয়।
এছাড়াও আইসিটি সেলের অধীনে বছরব্যাপী প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল প্রদান ও ই-মেইলের পাসওয়ার্ড জটিলতা সংক্রান্ত বিষয় সমাধানে সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কারিগরি সহায়তায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম চলছে। ছাত্রী হলের অনলাইন আবেদন ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের জন্য উদ্বোধন করা হয়েছে নিজস্ব সফটওয়্যার। 
পাশাপাশি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ‘ক্যাম্পাস নেটওয়ার্ক প্রকল্পের মাধ্যমে আইসিটি সেলের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি বিভাগ এবং দপ্তরে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করার জন্য ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সাহায্যে একটি ব্যাকবোন নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। বিডিরেন প্রকল্পের আওতায় ক্যাম্পাসে একটি আধুনিক ভার্চুয়াল ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমাদের একাডেমিক রেজাল্টের অপশন ওয়েবসাইটে আছে৷ কিন্তু সেখানে রেজাল্ট দেখার সুযোগ নেই। রেজাল্ট দেখতে পারলে আমাদের আর দীর্ঘপ্রক্রিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো না। ক্যাম্পাসে ইন্টারনেট ব্যবস্থা আরও সমৃদ্ধ করা দরকার। যেন অন্তত ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ভালোভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।
এসব বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য্য বলেন, বর্তমান ওয়াইফাই ব্যবস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে ক্যাম্পাসের ওয়াইফাই ব্যবস্থা আরও উন্নত করা যায়। এজন্য বিডিরেনের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। সেখান থেকে একটি কারিগরি দল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবে।
ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই ব্যবস্থা কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সে বিষয়ে প্রস্তাবনা দিবে দলটি। সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিব। 
তিনি বলেন, প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট সংযোজন করে দেওয়া হবে।