জব্দ রুশ সম্পদ ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করতে চায় জি৭

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইতালিতে চলতি সপ্তাহে গ্রুপ অব সেভেনের (জি৭) অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক হতে যাচ্ছে। এবারের বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য বিষয় ইউক্রেন যুদ্ধে কীভাবে জব্দ করা রুশ সম্পদ ব্যবহার করা যাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের ক্রমবর্ধমান রপ্তানি শক্তিকে মোকাবিলার করা যাবে। খবর: রয়টার্স।

জি৭ নেতারা বলছেন, বৈঠকে উভয় বিষয়ে একটি সাধারণ ভিত্তি খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন নেতারা। শুক্র ও শনিবার ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় স্ট্রেসা শহরে জড়ো হবেন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি ও কানাডাÑএই সাত দেশের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়া বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনা শুরুর পরপর দেশটির ৩০ হাজার কোটি ডলারের সম্পদ জব্দ করে পশ্চিমারা দেশগুলো। সেই অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার কীভাবে করা যাবে, তা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা করছেন জি৭ নেতারা। যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পদগুলো থেকে ভবিষ্যৎ আয় বাড়ানোর উপায় খুঁজে বের করার জন্য চাপ দিচ্ছে। দেশটি মনে করছে, একটি বন্ড ইস্যু করার মাধ্যমে অথবা সম্ভবত ইউক্রেনকে একটি ঋণ দেয়ার মাধ্যমে আয় বাড়ানো যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহারের পক্ষে ছিল। তবে ইইউ কর্তৃপক্ষ মনে করছিল, এটা আইনগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।

একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের কিছু করতে গেলে অনেক আইনি এবং প্রযুক্তিগত দিক বিবেচনা করতে হবে। যার অর্থ, স্ট্রেসাতে একটি বিশদ চুক্তি হবে এমন কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। এক্ষেত্রে একটি অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে আগামী ১৩-১৫ জুন ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় পুগলিয়ায় জি৭-এর সরকার প্রধানরা জড়ো হবেন।

ইউক্রেনের জন্য জি৭ একটি বন্ড ইস্যু করবে, এমন ধারণা খেই হারিয়ে ফেলেছে। এর পরিবর্তে বরং জব্দ করা সম্পদ থেকে আয়ের প্রবাহ হিসেবে দেশটিকে এখন একটি ঋণ দেয়ার প্রস্তাব রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই ঋণটি কে পরিচালনা করবেÑবিশ্বব্যাংক নাকি অন্য কোনো সংস্থা, এটি কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, কীভাবে ভবিষ্যতের লাভ হিসেবে করা যেতে পারে এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যৎ কোনো শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে এ নিয়ে কী কী ঘটতে পারে, এসব দিক এখনও স্পষ্ট নয়।

এ বিষয়ে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বিশেষভাবে সতর্ক রয়েছেন। এক ইইউ কূটনীতিক বলেছেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য ‘কয়েক মাস না হলেও অন্তত কয়েক সপ্তাহ’ সময় তো লাগবেই।

গত মার্চে রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ইউক্রেনকে দিতে পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কিয়েভ। তাদের ভাষ্য, এই অর্থ তারা তাদের দেশের পুনর্গঠন এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ব্যবহার করতে পারবে। ২০২২ সালে মস্কোর আগ্রাসনের পর থেকে পশ্চিমারা রাশিয়ার যেসব ব্যাংক হিসাব, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সম্পদ জব্দ করেছে, সেগুলোর শত শত কোটি ডলার দিয়ে ইউক্রেনের জন্য তহবিল গঠন করতে ওয়াশিংটন ও ইউরোপে জোর দাবি উঠেছে। একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়। রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করার পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলোয় রাশিয়ার যে সম্পদ ছিল, তা জব্দ করা হয়।

রাশিয়ার যত সম্পদ জব্দ হয়েছে, তার বড় অংশ ইইউতে। এর বড় অংশ আবার বেলজিয়ামের ক্লিয়ারিং হাউস ইউরো ক্লিয়ারিংয়ের হাতে জব্দ। এখন বেলজিয়ামের হাতে যেসব সম্পদ আছে, তার ওপর ধার্য করা কর ইউক্রেনের পুনর্গঠনের ব্যবহারের লক্ষ্যে আলাদা করা যাবে। এই তহবিল ব্যবস্থাপনা করে বেলজিয়াম সরকার।

গত বছর বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে দেশটির কমপক্ষে ৪১১ বিলিয়ন বা ৪১ হাজার ১০০ কোটি ডলার লাগবে। সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও তাদের মিত্ররা রাশিয়ার কাছ থেকে কোনোভাবে এই অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা করতে চাইছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০