চলনবিল অঞ্চলের কৃষকরা প্রায় বিনাচাষে রসুন আবাদ করছেন। গত বৃহস্পতিবার শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছে এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন। বিলের জমিতে মূলত ধানের আবাদ হলেও আমন চাষের পর ক্ষেত থেকে পানি নেমে গেলে কৃষকরা সেখানে রসুন আবাদ করেন। এতে আলাদা কোনো যতœ লাগে না, ধানের তুলনায় খরচও কম। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা দিন দিন রসুন চাষে ঝুঁকছেন। এক জমি থেকে একাধিক ফসল উৎপাদন অবশ্যই সুসংবাদ; কিন্তু তাতে জমির উর্বরতা যেন নষ্ট না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।
চলনবিলের বুকজুড়ে কৃষকরা ধান ছাড়াও অন্যান্য শস্য ও মসলার আবাদ করেন। বর্ষা ও বর্ষা-পরবর্তী সময়ে মাছের বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিলটি। পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এ বিল হাজার হাজার পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস। বিলের পানি ধরে রেখে ধান চাষ যেমন ধনী কৃষকের রোজগারের উৎস, তেমনি শীত-পূর্ব সময়ে ছোট ছোট ডোবায় মাছ ধরেও অনেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ অবস্থায় প্রায় বিনাচাষে নতুন একটি ফসল তোলা জমির মালিকদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। বছরের উল্লেখযোগ্য সময় পানিতে ডুবে থাকায় চলনবিলের অধিকাংশ জমিই উর্বর এবং সেখানে সেচের প্রয়োজন হয় তুলনামূলক কম। ফলে কৃষকরা তাদের জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারেন।
এও মনে রাখতে হবে, প্রকৃতি সবসময় উদারহস্তে দান করে না। আমাদের জনসংখ্যা বেশি, সে তুলনায় জমি কম। স্বভাবতই সীমিত জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার আমরা করতে চাইবো। সেটি করতে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে জমির যেন ক্ষতি না করে ফেলি, তার প্রতিও লক্ষ রাখতে হবে। কোনো একটি ফসলে লাভ বেশি হলে সবাইকে যে ওই ফসলে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, এ প্রবণতাও বন্ধ হওয়া দরকার। রসুনের মতো নিশ্চয়ই এমন আরও ফসল আছে, যা তুলনামূলক কম চাষে উৎপাদন করা যাবে। আমরা অনেক সময় চাহিদার প্রতি লক্ষ না রেখে সবাই একসঙ্গে একই ফসল উৎপাদন শুরু করি। ফলে পরের বছর তার দাম পড়ে যায় এবং কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের উদ্যোগী হয়ে কৃষকদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে। চলনবিলের মতো এরকম জমি, যেখানে দুটি ফসলের মধ্যবর্তী সময়ে আরেকটি ফসল উৎপাদন সম্ভব, সেগুলো খুঁজে বের করা প্রয়োজন। তবে জমির উর্বরতা নিশ্চিত করে তারপরই যেন পরিকল্পনা অনুসারে চাষ করা হয়, তা স্থানীয় কৃষি অফিসকে নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই কেবল সীমিত সম্পদ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা তুলে নেওয়া সম্ভব। নইলে স্বল্প মেয়াদে লাভবান হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।