Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 1:44 am

জয়পুরহাটে চামড়া কেনায় প্রস্তুতি নেই, ভারতে পাচারের আশঙ্কা

মো. শামীম কাদির, জয়পুরহাট: একে তো কভিড-১৯-এর প্রভাব, তার ওপর ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি টাকা বকেয়া। এ কারণে কোরবানির পশুর চামড়া কেনা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জয়পুরহাটের চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাদের আশঙ্কা, চামড়া কিনতে না পারলে তা চোরাকারবারির হাতে চলে যাবে। দেশের কোটি টাকার চামড়া পাচার হয়ে যাবে ভারতে। তাই এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান করেছেন জয়পুরহাটের চামড়া ব্যবসায়ীরা।

প্রতি বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে জয়পুরহাটের আড়তগুলো থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার পশুর চামড়া ঢাকায় সরবরাহ করা হয়। তবে চলতি বছর জেলার চামড়ার আড়তগুলোয় নেই কোনো প্রস্তুতি। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার পাশাপাশি বর্তমান বাজার ধসে এমনিতেই লোকসান, তার ওপর ট্যানারি মালিকদের প্রায় ১২ কোটি টাকার বাকি দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক চামড়া ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় চামড়াশিল্পকে বাঁচাতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন চামড়া মালিক সমিতি।

জয়পুরহাট শহরের আরাফাত নগর, আমতলী, পাঁচবিবি উপজেলার রেলগেট, আক্কেলপুর উপজেলার হাজিপাড়া এলাকায় চামড়ার আড়তগুলোয় প্রতি বছরের মতো এবার কোনো প্রস্তুতি চোখে পড়েনি। এসব আড়তের চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকরা গত কয়েক বছরের পাওনা কোটি টাকা এখনও পরিশোধ করতে পারেননি। এছাড়া প্রতি বছর ট্যানারি মালিকদের বেঁধে  দেয়া দামের চেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে চামড়া কেনায় বিপাকে পড়েছেন মূল ব্যবসায়ীরা।

সীমান্ত জেলা হওয়ায় চামড়া পাচারের আশঙ্কাও থাকে এখানে। সেই সঙ্গে চামড়ার প্রধান কাঁচামাল লবণের দাম এবং শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই বকেয়া টাকা পরিশোধে ট্যানারি মালিকরা যেন উদ্যোগ নেন ও সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোও যেন সহজ শর্তে ঋণ দেয়Ñএ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টিও কামনা করেন তারা।

জয়পুরহাটের চামড়া ব্যবসায়ী শাহিন আকতার জানান, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে তারা আড়তগুলো প্রস্তুত রেখেছেন। তবে ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা না পাওয়ায় তারা বিপাকে রয়েছেন চামড়া কেনা নিয়ে। এদিকে ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে না পারায় নতুন করে ঋণ দিচ্ছে না। ফলে আসন্ন ঈদে নতুন করে চামড়া কেনা মুশকিল হয়ে পড়বে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।

তিনি জানান, ট্যানারি মালিকরা সবসময় সিন্ডিকেট দিয়ে চামড়া কেনেন এবং দাম পরিশোধেও সিন্ডিকেট করে সামান্য টাকা দেন, যা দিয়ে তারা ব্যবসা চালাতে পারছেন না।

পাঁচবিবি উপজেলার চামড়া ব্যবসায়ী অহেদুল হোসেন ছোটন জানান, চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাচার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এ শিল্পসংশ্লিষ্টরা করোনার মধ্যেও লাভের মুখ দেখবে।

কোরবানির আগেই পুঁজি সরবরাহ করে চামড়া শিল্পকে সচল রাখবে ট্যানারি মালিকÑএমন আশা ব্যক্ত করে জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শামিম আহমেদ জানান, ‘দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি চামড়া শিল্প। এ শিল্পের প্রসারে কাঁচামাল লবণের দাম স্থিতিশীল রাখাসহ চামড়া পাচার রোধ ও বকেয়া টাকা পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এ শিল্প টিকে থাকবে।’

এদিকে চামড়া পাচার রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন উল্লেখ করে জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল ইসলাম জানান, জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন সীমান্ত এলাকা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২ কিলোমিটার এলাকা তারকাঁটায় ঘেরা, বাকি ১৯ কিলোমিটার সীমান্তে তারকাঁটা নেই। চোরাকারবারিরা মূলত এ জায়গাগুলোকে তাদের পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাই এ জায়গাগুলো সবসময় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়।