জয়পুরহাটে ধারণক্ষমতার পাঁচগুণ বন্দি কারাগারে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ‘দিনে ওয়ার্ড থেকে বাইরে বের হয়ে তাও চলাফেরা করা যায়। কিন্তু রাতে অনেক কষ্টে থাকতে হয়। কোনো দিন এক কাত হয়ে, আবার কোনো দিন চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে হয়। কারাগারের ভেতরে ঘুমাতে অনেক কষ্ট হয়।’

কথাগুলো বলছিলেন জয়পুরহাট জেলা কারাগার থেকে সদ্য বেরিয়ে আসা আব্দুল মতিন নামে এক ব্যক্তি। তিনি তিন মাস ধরে হাজতে ছিলেন। আব্দুল মতিন বলেন, আমি যে ওয়ার্ডে ছিলাম, সেখানে ১৫০ জন ছিল। রাতে তো কষ্ট হতোই, আবার সকালে বাথরুমে গেলে লাইন ধরতে হয়। আমাদের এত জনের জন্য মাত্র একটি পায়খানা ও একটি প্রসাবখানা। খবর : ঢাকা পোস্ট

শুধু আব্দুল মতিনই নয়, এমন কষ্ট নিয়ে ওই কারাগারে রয়েছেন ৭৪৩ জন বন্দি। তবে কারাগারটির ধারণক্ষমতা মাত্র ১২৭ জন। এদিকে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে প্রতিদিন গ্রেপ্তার হচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। গত ২৯ অক্টোবর জয়পুরহাট জেলাজুড়ে বিএনপি-জামায়াতের ৫৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া অন্য মামলায় আরও ১২ জনসহ ৬৬ জনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

এছাড়া প্রতিদিনই কোনো না কোনো মামলায় কারাগারে যেতে হচ্ছে আসামিদের। তবে যে হারে কারাগারে বন্দি বাড়ছে সেই হারে জামিন মিলছে না। এতে দিনদিন কারাগারে বাড়ছে বন্দির সংখ্যা। এভাবে প্রতিনিয়ত বন্দি বাড়তে বাড়তে ওই কারাগারে ধারণক্ষমতার পাঁচগুণেরও বেশি বন্দি রয়েছে। জেল কর্তৃপক্ষের হিসেবে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

১২৭ জন বন্দি ধারণক্ষমতার এই কারাগারে বর্তমানে ৭৪৩ জন বন্দি আছেন। দিনের বেলায় ওয়ার্ডের বাইরে বন্দিরা ঘোরাফেরা করলেও বিকাল থেকে তাদের ওয়ার্ডের ভেতরে প্রবেশ করতে হয় এবং গাদাগাদি করে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়।

জেল কর্তৃপক্ষ জানায়, ৮ দশমিক ৬ একর জায়গাজুড়ে জয়পুরহাট জেলা কারাগার। তবে এর মধ্যে ৩ একর জায়গার মধ্যে বন্দিরা বসবাস করেন। ১১৫ জন পুরুষ ও ১২ জন মহিলাসহ বন্দি ধারণক্ষমতা ১২৭ জন হলেও বর্তমানে এ কারাগারে আছেন ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ৭০৫ জন পুরুষ ও ৩৮ জন মহিলা বন্দি। এদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ২৫৫ জন ও ৪৮৮ জন বিচারাধীন। ১২৭ জন বন্দির জন্য ৭টি ওয়ার্ড ও ১০টি সেল রয়েছে।

জেল কর্তৃপক্ষ স্বীকার না করলেও সদ্য জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে আসা অনেক হাজতি আসামি বলছেন, জেলখানায় বন্দিদের মানবেতর জীবনের কথা। প্রতিনিয়ত আসামিরা জেলে যাচ্ছে। এতে কারাগারের ভেতরে উপচে পড়ছে বন্দিতে। দিনের বেলায় বন্দিরা ওয়ার্ডের বাইরে ঘোরাফেরা করলেও বিকাল থেকে তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। অধিক বন্দি থাকায় শোবার পরিবেশ নেই। গাদাগাদি করে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়।

আব্দুল মতিন আরও বলেন, ভেতরে খাবার কেনার জন্য একটি ক্যান্টিন আছে। সেখানে দাম বেশি। আবার বাইরে থেকে খাবার পাঠালে কাছে পৌঁছাতে সময় লাগে। সপ্তাহে একদিন পরিবারের সঙ্গে কথা বলা যায়। জীবনে একবারই জেলে যাওয়া হলো। ভেতরে অনেক কষ্ট।

জেল থেকে বেরিয়ে আসা মো. ময়েন নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, খুব সকালে ওয়ার্ড খুলে দিলে বাইরে ঘেরার মধ্যে থাকতে হয়। আবার বিকাল ৫টার দিকে ওয়ার্ডের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। বাইরে থাকলে তাও মোটামুটি ভালো কিন্তু ওয়ার্ডের ভেতরে অনেক কষ্ট। একেক ওয়ার্ডে ১৩০ জন থেকে ১৫০ জন পর্যন্ত থাকতে হয়। রাতে গাদাগাদি করে ঘুমাতে হয়। প্যাকেটে বিস্কুট যেভাবে সাজানো থাকে, এমন করে শুয়ে থাকতে হয়। তাছাড়া একটি ওয়ার্ডে টয়লেট মাত্র একটি।

গত কয়েকদিন কারাগারে আসামি বেশি এসেছে জানিয়ে জেল সুপার রীতেশ চাকমা বলেন, কারাগারে বন্দির সংখ্যা বাড়লেও জামিনে কারাগার থেকে সে তুলনায় অনেক কম সংখ্যক বন্দি বের হচ্ছে। বর্তমানে কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বন্দি রয়েছে। ভেতরে তাদের জীবনযাপনে সমস্যা হলেও ওই ভাবেই থাকতে হচ্ছে। এই সমস্যার বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে চিঠি পাঠিয়েছি।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভিতরে শৌচাগার বাড়ানো হয়েছে। এতে তাদের তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তাছাড়া ১২৭ জন বন্দি ধারণক্ষমতা থাকলেও খাবারে তাদের কোনো সমস্যা হয় না। কেননা বন্দি যত সংখ্যক থাকে তার ওপর ভিত্তি করে খাবার কেনা হয়।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, যেহেতু বিষয়টি কারাগার কর্তৃপক্ষের, সেজন্য এক মাস আগে ওই দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা বাড়ানো ও বিল্ডিং ভেঙে নতুন করে বাড়ানোর জন্য অবগত করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০