জয়পুরহাটে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক

প্রতিনিধি, জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের কৃষকরা সোনালি আঁশখ্যাত পাট চাষে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন। জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট চাষ হয় জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি উপজেলায়। আক্কেলপুর ও ক্ষেতলালের সামান্য জমিতে পাট চাষ হলেও কালাই উপজেলায় পাট চাষ হয় না। এক সময় দেশের প্রধান অর্থকড়ি ফসল ছিল পাট। পর্যাপ্ত জলাশয়ের অভাব, পচনের জন্য পানি সংকট, ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, সার, কীটনাশকের দাম নাগালের বাইরে, উৎপাদন খরচ বেশিসহ বিভিন্ন কারণে কৃষিপ্রধান এ জেলায় পাটের আবাদ কমতে শুরু করেছে।

বর্তমানের বেহালদশা উল্লেখ করে পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর কৃষক রমজার আলী জানান, গত বছর তিনি ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে বেশি টাকায় শ্রমিক নিতে হয়েছে এবং খরচ বেশি হওয়ায় লাভ করতে পারেননি। সরকারিভাবে পাটের যে বীজ সরবরাহ করা হয়, তা পাওয়া যায় অনেক দেরিতে। ফলে সরকারের দেয়া সুযোগ তাদের কাজে লাগে না। জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের জামতলী গ্রামের কৃষক ইমন আলী জানান, আবহাওয়া ভালো থাকলেও প্রতি বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ৮ মণ পাট হয়। এতে যে পরিমাণ খরচ তাতে পোষায় না। এজন্য গত বছরের তুলনায় এবার পাট চাষ কমিয়ে দিয়েছি।

আক্কেলপুর উপজেলার কৃষক স্বপন মণ্ডল জানান, দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে তার শ্রমিক বিল বাবদ খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। আর এ কাজের জন্য সবসময় শ্রমিকও পাওয়া যায় না। জমি থেকে পাট কাটার পর জাগ দেয়ার সময় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সরকারি খালগুলো প্রভাবশালীরা দখল করে নেয়ায় আগের মতো যেখানে-সেখানে পাট জাগ দেয়া সম্ভব হয়না। তিনি আরও বলেন, খালগুলো ভরাট করার ফলে পানি স্বল্পতার দেখা দিয়েছে। তার জমি থেকে অনেক দূরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এতে পরিবহন খরচ হয়েছে অনেক। সব পক্রিয়া শেষে হাটে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেছেন তিনি। এতে তার খরচ ওঠা তো দূরের কথা, যে আশা নিয়ে তিনি পাট চাষ করেছিলেন তা পূরণ হয়নি। এখন থেকে অন্য ফসল চাষ করবেন বলে জানান তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে জেলায় ৩ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয় ৩ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে। আর চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। সে হিসেবে গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ কমেছে ২৩৮ হেক্টর জমির। জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ীর অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মো. মজিবুর রহমান জানান, কম বৃষ্টিপাত, শ্রমিকের মজুরি বেশি, পাট রোপণ ও পচানোতে সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। এদিকে খরচ ও সময় কম লাগায় সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন তারা। তবে পাটের আবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগ থেকে যাবতীয় সহযোগিতা এবং পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০