জয়পুরহাটে হলুদ তরমুজ চাষে ভাগ্য খুলছে কৃষকদের

এ টি এম সেলিম সরোয়ার, জয়পুরহাট: জয়পুরহাটে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিদেশি জাতের বিভিন্ন বারোমাসি তরমুজ চাষ। বিঘাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, তরমুজ চাষে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হবেন, অন্যদিকে সারাবছর এ সুস্বাদু এ ফল খেতে পারবেন সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রথম জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভাড়াহুত গ্রামের কৃষক আবু মুসা মাত্র আড়াই শতক জমিতে মাচায় ব্লাকবেবি ও মধুমালা তরমুজ চাষ শুরু করেন। পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে এ তরমুজের চাষ করে ৭০ দিনে লাভ হয় ২২ হাজার টাকা। পরে তার সাফল্য দেখে পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়ে এ চাষ। বর্তমানে জয়পুরহাট সদর, কালাই, পাঁচবিবি ও আক্কেলপুর উপজেলার ৬৫টি গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক কৃষক তৃপ্তি, ডায়না, সুগার কুইনসহ বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করছেন। এসব জাতের বেশিরভাগ তরমুজ চীন, থাইল্যান্ড ও তাইওয়ানের।

বাজারমূল্য ভালো হওয়ায় ধানসহ অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকরা। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বাড়ছে দিনদিন। বর্তমানে এ তরমুজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

জেলার প্রথম তরমুজ চাষি পাঁচবিবি উপজেলার ভাড়াহুত গ্রামের আবু মুসা বলেন, একটি বেসরকারি এনজিওর পরামর্শে তিনি ২০১৮ সালে আড়াই শতক জমিতে তরমুজ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তিন বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করছেন তিনি। অসময়ে  এ তরমুজ চাষ দেখে প্রথমে অনেকেই হাসাহাসি করেছেন। কিন্তু তরমুজের ফলন ভালো, স্বাদ ও বাজার ভালো হওয়ায় এখন অনেকেই চাষ করতে আমার কাছে পরামর্শ নিতে আসেন।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার গ্রামের কৃষক আতিকুল ইসলাম বলেন, ধান-আলুর চেয়ে এ তরমুজ চাষ অনেক লাভজনক ফসল। আমি এ বছর ১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে দেড় লাখ টাকার বেশি তরমুজ বিক্রি করেছি। জমিতে আরও তরমুজ আছে সেগুলোও বিক্রি করব।

কৃষক রেজুয়ান হোসেন বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। এবার বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো রয়েছে। আমি এক বিঘা জমির তরমুজ ২ লাখ টাকার কাছাকাছি বিক্রি করেছি।

ভুতগাড়ী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, কৃষি অফিস থেকে কোনো অফিসার আমাদের কাছে আসে না। তাই তরমুজ গাছের কোনো রোগ হলে আমরা বেকায়দায় পড়ি।

কালাই উপজেলার খুশাল নওপাড়া গ্রামের কৃষক নুর মুহাম্মদ বলেন, বীজ রোপণের ৩৫ দিনের মধ্যে গাছ মাচায় উঠে যায়। ৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল ও কুঁড়ি আসে। তারপর ৭৫ দিনের পরিপক্ব হয়ে মাচায় ডগায় ডগায় ঝুলে আছে আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের প্রায় ২৪০০ তরমুজ। ওই তরমুজ কাটলে ভেতরে লাল টুকটুকে, রসালো আর খেতে মিষ্টি ও খুব সুস্বাদ।

তিনি আরও বলেন, আশা করছি এ মাসেই সব তরমুজ বিক্রি হবে। বর্তমান বাজারে এ তরমুজের চাহিদা অনেক বেশি, দামও ভালো আছে। প্রতিটি তরমুজ গড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হবে। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে আমার আয় হবে প্রায় ২ লাখ টাকারও বেশি।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় প্রায় ৪০০ বিঘার বেশি জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। লাভজনক এ চাষ আরও বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কারিগারি সহায়তাসহ সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০