বাংলাদেশে নারীর প্রজননতন্ত্রের ক্যানসারগুলোর মধ্যে ৭০ শতাংশই জরায়ুমুখ ক্যানসার (সার্ভিক্যাল ক্যানসার)। কিন্তু এটি এমন এক রোগ, যা প্রতিরোধের জন্য রয়েছে কার্যকর টিকা। আছে ক্যানসারপূর্ব অবস্থা শনাক্তকরণের পরীক্ষাও। এই দুটি প্রতিরোধব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস নামীয় গোত্রের ভাইরাস জরায়ুমুখ ক্যানসারের জন্য দায়ী। বাল্যবিয়ে, কম বয়সে সহবাস, অধিক সন্তান ধারণ ও ঘনঘন সন্তান প্রসব, বহুগামিতা, ধূমপান, দীর্ঘদিন একনাগাড়ে জš§নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন, প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ ও এইচআইভি/এইডস রোগে আক্রান্ত হলে এই ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। সাধারণত ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী নারীরা বেশি আক্রান্ত হন।
উপসর্গ: প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগের কোনো লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। সহবাসের পর রক্তক্ষরণ, মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আবার রক্তপাত, অনিয়মিত বা অতিরিক্ত রক্তস্রাব, সাদা স্রাব, তলপেটে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, হাড়ে ব্যথা, যোনিপথ দিয়ে প্রস্রাব বা পায়খানা নির্গত হওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়া প্রভৃতি।
করণীয়: সাধারণত ৯ থেকে ২৬ বছর বয়সী মেয়েদের জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধী টিকা দেয়া হয়। তবে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত নারীদেরও এই টিকা দেয়া যাবে। সহবাসের আগে টিকা দেয়া হলে তা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়।
স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যানসার আগেভাগেই শনাক্ত করা সম্ভব। ফলে চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যানসার থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠা যেতে পারে। এইচপিভি ডিএনএ টেস্ট, প্যাপ স্মিয়ার, ভায়া টেস্ট প্রভৃতি এ ক্ষেত্রে ব্যবহƒত হয়। এগুলোর মধ্যে এইচপিভি ডিএনএ টেস্ট সবচেয়ে কার্যকর। টিকা দিলেও স্ক্রিনিং টেস্ট করতে হবে। তিন থেকে পাঁচ বছর পরপর এটা করা হয়ে থাকে।
অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির মাধ্যমে এই ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়। অন্যান্য ক্যানসারের সঙ্গে এই ক্যানসারের পার্থক্য হলো এটি প্রাথমিক অবস্থায়ই শনাক্ত করা সম্ভব এবং যথাযথ সময়ে চিকিৎসা নিলে পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব। তাই সচেতনতাই পারে রোগটিকে রুখতে।ডা. ফারহানা তারান্নুম খান
সহকারী অধ্যাপক, গাইনিকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগ
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা