জরুরি ঋণ চায় সংকটে থাকা এয়ার ইন্ডিয়া

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ঋণের ভারে জর্জরিত এয়ার ইন্ডিয়া (এআই) বিক্রির পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্রেতা মেলেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটিকে কিনতে কেউ আগ্রহ দেখায়নি। তাই প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে জরুরি ভিত্তিতে ১০ বিলিয়ন রুপি ঋণ চাইছে। এদিকে প্রতিষ্ঠানটি কিনতে অনীহা এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের। খবর এএফপি।
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কার্যক্রম চালিয়ে যেতে জরুরি ভিত্তিতে স্বল্প মেয়াদে ১০ বিলিয়ন রুপি বা ১৪৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দরকার’। গত তিন মাসে কর্মীদের ঠিক সময়ে বেতন দিতে ব্যর্থ হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া।
এদিকে নতুন করে ঋণের চাপ কীভাবে সামলানো হবে, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে এয়ার ইন্ডিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নতুন করে মূলধন সরবরাহ চালু করার জন্য কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
নতুন করে মূলধন জুগিয়ে এয়ার ইন্ডিয়াকে চাঙা করা আসলে ইউপিএ সরকারের ২০১২ সালের পরিকল্পনা। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ায় ৩০ হাজার ২৩১ কোটি রুপি মূলধন সরবরাহের পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছিল। তার মধ্যে ২৬ হাজার কোটি রুপি ইতোমধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়াকে দেওয়া হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সাল থেকে মূলধন জোগানোর পরিকল্পনায় কাটছাঁট শুরু হয়। ফলে বিলম্বিত হয় কর্মীদের বেতন। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে ছয় হাজার ২৫০ কোটি রুপি ঋণ নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া আপৎকালীন ভিত্তিতে কার্যকরী মূলধনের সংকট মেটায়। চলতি বছরের মার্চে সংস্থাটির ঋণের বোঝা ছিল ৫০ হাজার কোটি রুপিরও বেশি। তা সত্ত্বেও এয়ার ইন্ডিয়া ২০১৮-১৯ সালে সরকারি সাহায্য পেয়েছে মাত্র ৬৫০ কোটি রুপি। সরকারের আশা ছিল, এয়ার ইন্ডিয়া কিনতে আগ্রহীর অভাব হবে না এবং চলতি বছরই সম্ভব হবে এয়ার ইন্ডিয়ার বিলগ্নিকরণ। সরকার বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর এয়ার ইন্ডিয়া কিনতে প্রাথমিকভাবে আগ্রহও দেখিয়েছিল টাটা গোষ্ঠী, ইন্ডিগো, জেট এয়ারলাইনস এবং স্পাইসজেট। প্রত্যেকটি কোম্পানিই আলাদাভাবে আলোচনায় বসেছিল সরকারের সঙ্গে। এ-ছাড়াও ছিল জিএমআর, জিভিকে, রিলায়েন্স, ডা ইন্টারন্যাশনাল, ফ্লুগহাফেন জুরিখের মতো বেশ কিছু দেশি-বিদেশি কোম্পানিও। কিন্তু সবগুলোই শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। ১৪ মে প্রাথমিক সময়সীমা শেষ হওয়ার পর দেখা গেল, উড়োজাহাজ বা তার বাইরের কোনো কোম্পানিই এয়ার ইন্ডিয়া কিনতে আগ্রহ দেখায়নি। সময়সীমা ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ানো হলো। তাতেও অবশ্য কোনো লাভ হলো না। পড়েই রইল লগ্নভ্রষ্ট এয়ার ইন্ডিয়া।
তেমনই একই সমস্যা অন্য অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির ক্ষেত্রেও। তাই চলতি অর্থবর্ষে বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া কীভাবে সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকারে।
এ বছর বিলগ্নিকরণ থেকে ৮০ হাজার কোটি রুপি ঘরে তোলার লক্ষ্য স্থির করেছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির কেন্দ্র অংশীদার কমাতে বাজারে শেয়ার ছাড়ছে, সেখানে তেমন কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণই বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে, সমস্যা সেখানেই। অর্থাৎ গণ্ডগোল কোম্পানি বিক্রি করতে গেলেই। কারণ ক্রেতা মিলছে না।
এয়ার ইন্ডিয়ার বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের সামনে এখন দুটি পথ খোলা। প্রথম পথ হলো, বিলগ্নিকরণের কথা ভুলে গিয়ে নতুন করে অর্থ সরবরাহ করে এয়ার ইন্ডিয়া চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়া বিলগ্নিকরণের সেই ব্যর্থতা মোদি সরকারের ভাবমূর্তির পক্ষে হানিকর হবেই। সঙ্গে জুটবে বিস্তর রাজনৈতিক গ্লানি। দ্বিতীয় পথ হলো, ৭৬ শতাংশ নয়Ñএয়ার ইন্ডিয়ার ১০০ শতাংশ শেয়ারই বিক্রি করে দেওয়া।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০