নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা বৃষ্টিতে ঢাকা শহরে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বেহাল হয়ে পড়েছে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা। নর্দমা ও ম্যানহোল উপচানো পানি কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর ছাড়িয়ে গেছে মানুষের। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এতে। সেই সঙ্গে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক যানজটের কারণে।
গতকাল দিনভর ছিল তুমুল বৃষ্টি। এতে জলাবদ্ধতা বেড়ে যাওয়ায় অনেক এলাকায় রিকশা ও ভ্যানচালকরা হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন। আর যারা যানবাহনে উঠেছেন কর্মস্থলে যাওয়ার লক্ষ্যে, তারাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্দি ছিলেন যানজটে। দেখা গেছে, বেলা ২টার কিছু পর বৃষ্টি থেমে যায়। তারপরও বিকাল নাগাদ রাজধানীর কাঁঠালবাগান, গ্রিন রোড, রাজাবাজার, তেজতুরী বাজার ও ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় পানি জমে থাকতে দেখা যায়। বেশ কয়েক জায়গায় পানির কারণে দোকানপাট বন্ধ ছিল। ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে পানি জমার কারণে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। খিলক্ষেত, রামপুরা, বাড্ডা, মিরপুর, আগারগাঁও এলাকায়ও একই অবস্থা দেখা গেছে।
রাজাবাজার এলাকায় কোমর পানি জমেছিল এক জায়গায়। সেখানে ১০-২০ টাকার বিনিময়ে রিকশায় চড়ে রাস্তা পার হতে দেখা গেছে অনেককে। বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে তেজতুরী বাজারে বুক সমান পানি জমে যায়। সেখানে বেশিরভাগ দোকানের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় দোকান বন্ধ করে চলে গেছেন দোকানিরা। ধানমন্ডির সোবহানবাগ এলাকায় বেশ কয়েকজন পরিবহন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজিমপুর থেকে সোবহানবাগ আসতে তাদের সময় লেগেছে প্রায় দুই ঘণ্টা। এ সময় অনেক যাত্রী গাড়ি থেকে নেমে গেছেন। যারা নিরুপায়, তারা গাড়িতেই বসে ছিলেন।
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের সামনের সড়কেও পানি জমে থাকতে দেখা যায়। সচিবালয়ের ভেতরে জমে যাওয়া পানি সরাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ডাকা হয়। এছাড়া সাধারণত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতা খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু ভারি বৃষ্টির কারণে ক্যাম্পাসেও রেজিস্ট্রার ভবনের গেট, উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে রাস্তা, মল চত্বর, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দুই পাশে, কলা ভবনে প্রক্টর অফিস ও ডিন অফিসের গেটের সামনেও পানি জমে থাকতে দেখা যায়।
লঘুচাপের প্রভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে গত রোববার থেকেই বর্ষণ চলছিল। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে ঢাকায় শুরু হয় টানা বৃষ্টি। বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদফতর। টানা ৯ ঘণ্টার বর্ষণে রাজধানীর রাজপথে জলজটের সঙ্গে যানজটে চরম ভোগান্তির একটি দিন পার করতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যাওয়ায় যানবাহনের গতি কমে সৃষ্টি হয় যানজট। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নকাজের জন্য খুঁড়ে রাখা রাস্তায় জট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ডুবন্ত রাস্তার ওপর দিয়ে রিকশায় চলতে গিয়ে বড় বড় গর্তে পড়ে আহতের ঘটনাও দেখা গেছে যাত্রাবাড়ীর একটি স্থানে। এদিকে বৃষ্টির কারণে গণপরিবহন কম থাকায় রাস্তায় নামা মানুষকে পোহাতে হয়েছে বাড়তি ভোগান্তি। এ সুযোগে অটোরিকশায় বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে তাদের।
পরিস্থিতি দেখতে বেরিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। তাকেও ধানমন্ডি এলাকায় গিয়ে হাঁটু পানিতে নামতে হয়। জলাবদ্ধতার জন্য একটানা বৃষ্টিকে দায়ী করে শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান। এ প্রসঙ্গে গতকাল স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ঢাকার এ পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। সামনের বছর আর এমন পরিস্থিতি হবে না বলেও তিনি আশ্বাস দেন।