Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 3:06 am

জলপাইয়ে সফল পঞ্চগড়ের কৃষক, দিনে বিক্রি ২০ লাখ

প্রতিনিধি, পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে উপকারী ফল জলপাইয়ের বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এতে জেলার অনেক কৃষক লাভবান হয়েছেন। আগে জেলার বিভিন্ন বাড়িতে শখের বসে অনেকে এ গাছের চারা রোপণ করেছেন। উৎপাদিত ফল নিজেরা খেতেন। পরে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ও বিপণন ব্যবস্থা চালু হওয়ায় এখন এখানকার কৃষকরা বাণিজ্যিকভিত্তিতে বাগান আকারে জলপাই চাষ শুরু করেছেন। এর মধ্যে দেবীগঞ্জ উপজেলা অন্যতম।

দেবীগঞ্জের ট্রেপ্রিগঞ্জ ও দণ্ডপাল ইউনিয়নে বাগান আকারে জলপাই চাষ হচ্ছে। উপজেলা সদরে দেবদারু তলায় বসে জলপাইয়ের হাট। ব্যবসায়ীরা কৃষকদের বাগান থেকে ফলটি সংগ্রহ করে এ হাটে আড়তদারের কাছে বিক্রির জন্য আনেন। পরে জেলার বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ট্রাকে ভরে তা নিয়ে যান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এখানের উৎপাদিত জলপাই গুণেমানে ভালো হওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছেন বাগান মালিকরা।

ট্রেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের রামগঞ্জ বিলাসি গ্রামের একজন কৃষক বলেন, বাগান আকারে জলপাই চাষ করে ফল বিক্রি করে এবার তিন লাখ টাকা উপার্জন করেছি। একই উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়নের আজগর আলী জানিয়েছেন, এবারে আটটি গাছের ফল বিক্রি করে তিনি দেড় লাখ টাকা আয় করেছেন।

কৃষকরা জানিয়েছেন, জলপাই চাষ লাভজনক। এতে খরচ তুলনামূলক কম। পরিচর্যার দরকার নেই। সার ও ওষুধ লাগে না। বাড়ির আশেপাশে ও পতিত জমিতে গাছ লাগালেই হয়।

মৌসুম আসার আগেই বাগান মালিকদের আগাম অগ্রিম টাকা দিয়ে বাগান কেনেন ব্যবসায়ীরা। পরিচর্যার পর ফল পরিপক্ব হলে নিজেরাই বাগান থেকে ফল তুলে তা নিয়ে যাচ্ছে আড়তে বিক্রির জন্য। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা গড়ে উঠায় উত্তরের এ জনপদের মানুষদের অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি এসেছে। জলপাই গ্রীষ্মকালীল ফল হলেও সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাছ থেকে ফল নামানো যায়। আর এ সময় দেবীগঞ্জের দেবদারু হাটে জলপাই বিক্রির উৎসব চলে। প্রতিদিন গড়ে ২০ লাখ টাকার জলপাই বিক্রি হচ্ছে এখান থেকে। প্রতি কেজি জলপাই প্রকার ভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেবীগঞ্জে দিনে ৬০ থেকে ১০০ মেট্রিক টন জলপাই কেনাবেচা হয়ে থাকে। প্রায় হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জলপাই কিনে বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এসব পণ্য পরিবহনে ট্রেন ও সড়ক পথের সুবিধা থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসার পরিধি বেড়ে যাওয়ায় জেলার অনেক বেকার কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

বাগান মালিক মিজানুর রহমান বলেন, প্রায় ১১ বছর ধরে জলপাই আবাদ করে বাজারজাত করছি। ঝুঁকি ও পরিচর্যা ছাড়াই প্রতি বছরে মৌসুমে এটি বিক্রি করে যে অর্থ পাই তা দিয়ে বছরের খরচ মেটানো যায়।

চুয়াডাঙ্গা থেকে জলপাই কিনতে আসা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, এ এলাকার জলপাইয়ের আকার বড়। স্বাদে ভালো হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা রয়েছে। এখান থেকে জলপাই কিনে বিভিন্ন জেলায় পাঠাই।

পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান জানান, এষানকার মাটি মাল্টা, কমলালেবু, পেয়ারা, বাতাবি লেবু ও জলপাই চাষের উপযোগী। এ কারণে অনেক কৃষক অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে এসব ফল চাষ করছেন। আশাতীত সাফল্য পাওয়ায় কৃষি বিভাগের তদারকি বাড়ানো হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, পঞ্চগড়ে ১২ হেক্টর জমিতে জলপাই চাষ হয়েছে। এবার ৩৩৮ মেট্রিক টন জলপাই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।