নিজস্ব প্রতিবেদক: জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আরও সক্ষম করে তুলতে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করল যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব সিভিল সোসাইট অরগানাইজেশনস ফর ডিজাস্টার রিডাকশন (জিএনডিআর)। এর মধ্যে দিয়ে জলবায়ু ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্কটির সঙ্গে যুক্ত হলো বাংলাদেশ।
গতকাল বুধবার অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও ব্র্যাকের আয়োজনে গুলশানের একটি কনভেনশন সেন্টারে জিএনডিআরের উদ্বোধন করা হয়। এ সময় জলবায়ু ও দুর্যোগ নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
জলবায়ু ও দুর্যোগবিষয়ক আন্তর্জাতিক এ নেটওয়ার্কটি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে ২০০৭ সাল থেকে। ১৩৭টি দেশের ৮৫০টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলাবিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক এখন জিএনডিআর। বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক যাত্রার মধ্য দিয়ে দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আগামীতে টেকসই কাজে ভূমিকা রাখবে নেটওয়ার্কটি। এরই মধ্যে বাংলাদেশের ৫০টি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এ নেটওয়ার্কের সদস্য হয়ে কাজ শুরু করেছে।
অনুষ্ঠানে জিএনডিআরের চেয়ারম্যান অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারহ্ কবির বলেন, সুশীল সমাজের এ নেটওয়ার্কটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেতুবন্ধের কাজ করবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজ করবে নেটওয়ার্কটি। নীতি প্রবর্তন বা সংযুক্তির ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে কাজ করবে আন্তর্জাতিক এ প্ল্যাটফর্ম, যাতে দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনা যায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর নানা দুর্যোগের শিকার হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এখন স্পষ্ট। সেখানে গবেষণা, জ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে মানুষের পাশে থাকাটা জরুরি। জিএনডিআর সেই কাজটিই করবে।
জিএনডিআরের বাংলাদেশের সমন্বয়ক তানজির হোসেন বলেন, এ নেটওয়ার্কটি বাংলাদেশের জলবায়ু ও দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্কের মতো আন্তর্জাতিক লক্ষ্য সামনে নিয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তির জ্ঞানের বিকাশের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করবে নেটওয়ার্কটি।
ব্্যাকের হিউম্যানিটারিয়ান রেসপন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট চেইঞ্জ বিভাগের প্রধান শশাঙ্ক সাদি বলেন, তরুণদের মধ্যে দুর্যোগসহনশীল দেশ গড়ার চিন্তা-ভাবনা বিকাশের জন্য এ নেটওয়ার্কের সঙ্গে শিক্ষকদেরও যুক্ত করতে হবে। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ তৈরি হবে। সরকার, গবেষক, উন্নয়নসহযোগী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে জিএনডিআর কাজ করবে।
২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর জিএনডিআর বিশ্বব্যাপী দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল মানুষদের জন্য কাজ করছে। ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে একটি দেশের সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কাজ করে নেটওয়ার্কটি। জাতিসংঘ থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত এই নেটওয়ার্কটি বিশ্বব্যাপী দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম।
জিএনডিআরের ধারণাপত্রে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা দুর্যোগ দিন দিন বাড়ছেই। আর এ দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সঠিকভাবে না করতে পারলে বাংলাদেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে জিএনডিআর দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, কারণ জিএনডিআরের লক্ষ্য হলো দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের জন্য এমন একটি জগৎ তৈরি করা হয়, যেখানে দুর্বল জনগোষ্ঠী দুর্যোগ প্রস্তুতি নিতে, বিপর্যয় এড়াতে, পুনরুদ্ধার করতে এবং ঝুঁকি ও একটি পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সক্ষম হয়। এই নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নীতি ও অনুশীলনের ওপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের প্রভাব বৃদ্ধিতে কাজ করছে। একই সঙ্গে সুশীল সমাজের একাত্ম হওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে নতুন জ্ঞান অর্জন ও তা ব্যবহার করে জলবায়ু পরির্তন এবং দুর্যোগ মোকাবিলা করতে কাজ করছে সংগঠনটি।
এরই মধ্যে বাংলাদেশের ৫০টি প্রতিষ্ঠান এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে জিএনডিআর উদ্বোধনের পর জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলার কাজ আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন আলোচকরা।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে বাংলাদেশ
