মাহমুদুল হক আনসারী: রোববার থেকে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর অলিগলি পানিতে থৈ থৈ। এইচএসসি সমমানের পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগ ছিল নজিরবিহীন। নগরীর কাফাসগোলা সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজে পরীক্ষার্থীর সেন্টার ছিল। সেখানে হাঁটু পানি। বহদ্দারহাট, চকবাজার, মুরাদপুর, আগ্রাবাদসহ নগরীর সবগুলো নিচু এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায়। চরম দুর্ভোগ পরীক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থী-অভিভাবক রাস্তায় এসে বৃষ্টির পানিতে দুর্ভোগের শিকার। সামান্য কিছু গণপরিবহন পাওয়া গেলেও কয়েকগুণ ভাড়া গুনে যেতে হয়েছে পরীক্ষার সেন্টারে। বর্ষার সময়ে কেন বোর্ড পরীক্ষার সময়সূচি সেখানেও অভিভাবকের অভিযোগ আছে। বাংলাদেশ ঋতু-প্রকৃতির দেশ। এখানে পরীক্ষার সময়সূচি ঋতুর সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে ঠিক করা উচিত। হাজার হাজার পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগ মাথায় রাখা উচিত।
নি¤œ আয়ের কর্মজীবীর মানুষের দুর্ভোগ আরও চরম। জলোচ্ছ¡াস, অস্বাভাবিক পানি নিষ্কাশনের কার্যকর উদ্যোগ নগরীতে দেখা যাচ্ছে না। পুরো নগরীজুড়ে সব নালাসমূহ আবর্জনার ভাগাড়। বাসাবাড়ির আবর্জনা, রাস্তার ময়লা, নালা পানি নিষ্কাশনের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। সিটি মেয়রের নাকের সামনে ময়লা। বহদ্দারহাট বাজার, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বহদ্দারহাট চাঁদগাঁও বাস টার্মিনাল, এর আশপাশের সবগুলো নালা ময়লার স্তূপে দিনের পর দিন পড়ে আছে। বাজারের ময়লা নালা আর রাস্তায় ফেলছে। পরিচ্ছন্ন কর্মী পরিষ্কার করে সেই ময়লা নালার পাশে জমান। সেখানে দিনের পর দিন পড়ে থাকে। বৃষ্টি আর বাতাসে আবার নালায় পড়ে। ৪১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, পরিচ্ছন্ন কর্মী থাকলেও বাস্তবে পুরো নগর অপরিষ্কার। নগরীর সমস্ত কাঁচা বাজার ময়লা আর দুর্গন্ধে ভরা। ষোলশহর ২নং গেট রাস্তার ওপর বছরের পর বছর ময়লার ওপর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার জনগণ চলাচল করছে। দুর্গন্ধের কারণে নাকে রুমাল দিয়ে রাখতে হয়। বিশ্ব রোড পুরোই রাস্তার বেশির ভাগ অংশ হকার দখলে রেখেছে। নিউমার্কেট এলাকার কিছু হকার উচ্ছেদ করতে দেখা যায়। অথচ নগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার, ষোলশহর, জিইসি, আগ্রাবাদ, অক্সিজেন, অলংকার মোড়, এ কে খান, কর্নেলহাট, দেওয়ানহাট, কোথাও ফুটপাত হাঁটার জন্য রাখা হয়নি। সমস্ত ফুটপাত হকারের দখলে। সিটি করপোরেশন ও কমিশনারের কাজ কি। নগরবাসী টেক্স দিচ্ছে। সেবা পাবে না। সময়মতো ময়লা পরিষ্কার করবে না। নালা পরিষ্কার করবে না। মাইক বাঁধিয়ে ট্যাক্সি করে মাইকিং করলেই কি মেয়রের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। এখন বৃষ্টির দিন কয়েক দিন খুব বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি হলেই নালার পানিতে রাস্তা ডুবে যায়। হাঁটুপানিতে নগরীর কোটি মানুষকে চলতে হচ্ছে। নালার ওপর দোকান-মার্কেট, ফুটপাতের হকারের দোকান থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ভাগ কাদের পকেটে নিচ্ছে সেটাও বলার সময় এখন। অগোছালো নগর, নালা আর ময়লার পানিতে চট্টগ্রাম নগরীর মানবজীবন চলছে। হালকা মাঝারি ধরনের বৃষ্টির পানিতে নগরীর বেশির ভাগ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের কোনো কার্যকর উদ্যোগের দেখা নেই। নালাগুলো পানি বহন করতে পারছে না। নালায় ময়লার জমাট। অল্প বৃষ্টিতে নগরজীবন ওষ্ঠাগত। অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনগণকে। ৪১ ওয়ার্ডের কমিশনার পরিচ্ছন্ন কর্মী দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে নগরজীবন পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্য সম্মত হবে। নালা ড্রেন পরিষ্কার থাকবে। দু-চার ঘণ্টার বৃষ্টি হলে নগর ডুবে যায়। হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বন্ধ করে দিতে হয়। নি¤œাঞ্চল ডুবে যায়। বৃষ্টি হলেই নিয়মিত এই দুর্গতি চট্টগ্রাম নগরবাসীর। এ অবস্থার কবে নাগাদ পরিত্রাণ মিলবে তার কোনো সঠিক কর্মসূচি নগরবাসী দেখছে না। ফলে বৃষ্টির পানি আর ময়লার আবর্জনার অসহনীয় দুর্ভোগ চট্টগ্রামে নগর জীবনের সাথি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। নানা রোগব্যাধি নাগরিক জীবনে তৈরি হচ্ছে।
পাহাড়তলী, সেলিমপুর, আকবরশাহ এলাকার পাহাড় ন্যাড়া করে ফেলেছে ভ‚মিদৃশ্যরা। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে পাহাড় ভেঙে মাটি রাস্তা আর বাসাবাড়িতে চলে আসে। পাহাড়ের লাল মাটিতে রাস্তা ভরে যায়। অপরিকল্পিত বিল্ডিং, আবাসিক এলাকা, সিডিএ অনুমোদনবিহীন নকশাবহিভর্‚ত বাড়ি ঘরের অনেক তথ্য পাওয়া যায়। সরকারি পাহাড়কে ন্যাড়া করে কোনো লিজ ছাড়া অনেকেই ঘর বাড়ি করে সেখানে বাস করছে। তারা সরকারি বিদ্যুৎ সরবরাহ ও পানির লাইন কীভাবে পেয়ে যায়, সেখানে ও নানা প্রশ্ন থেকে যায়। এর বাইরে আবাসিক এলাকায় অনুমোদনবিহীন ক্ষুদ্র মাঝারি ধরনের নানা প্রকারের ফ্যাক্টরি গড়ে উঠছে। একে খান মোড় থেকে রাস্তার দুই পাশে জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠেছে, ফার্নিচার, লোহা, জাহাজ ভাঙা, টেম্পো, অটোরিকশা গেরেজ। বেটারি চালিত রিকশায় এখানে চার্জ দেয়া হয়। এসব ফার্নিচার দোকানের উচ্ছিষ্ট এবং লোহার অংশ আবাসিকে ঢুকে পড়ছে। কারখানার শব্দে আর ধুলা ময়লার ফলে নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টি হচ্ছে। চুলকানি, কাশি, শব্দ দূষণ হচ্ছে। দূষিত হচ্ছে আবাসিক পরিবেশ। সেখান কার ময়লাগুলো ফেলছে নালা আর রাস্তায়। নান্দনিক শহর আর পরিবেশের জন্য মোটেও উপযোগী নয়, এসব যত্রতত্র গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা। তাই সিটি করপোরেশনকে নগর ও জনবান্ধব হতে হবে। নাগরিক জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা দিতে হবে। দৈনন্দিন জীবন-জীবিকার খোঁজখবর রাখতে হবে। ভেজাল খাদ্য উৎপাদন, বাজারজাত মনিটরিং করতে হবে। নগরীর রাস্তা দখল করে গড়ে ওঠা হাটবাজার উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংলগ্ন এলাকায় দোকান বসতে দেয়া যাবে না। নগরীর আবাসিকে রাত জেগে মেহেদি অনুষ্ঠানের নামে উচ্চামাত্রায় গান-বাজনা উচ্ছৃঙ্খল শব্দ বন্ধ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সিডিএ,সিটি করপোরেশনকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। কিশোর অপতৎপরতা রোধে টহল জোরদার করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। শহর নগরীর পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের মানবিক সাহায্যের আওতায় আনুন। সরকারি-বেসরকারি বৃত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। শৃঙ্খলায় ফিরে আসতে হবে। সমন্বয় রেখে সেবা প্রধান করতে হবে। বর্ষার সময়ে রাস্তা ও ড্রেনের খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে হবে। নগরজীবনকে আশঙ্কামুক্ত করতে সব সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় থাকা চাই। তবেই নগরজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসতে পারে।
সংগঠক, গবেষক, কলামিস্ট
Mh.hoqueansari@gmail.com