জাকাত বণ্টনের উত্তম পন্থা

জাকাত একটি আরবি শব্দ যার অর্থ ‘পরিশুদ্ধকরণ, পবিত্র করা, বৃদ্ধি পাওয়া, বরকত হওয়া ইত্যাদি’। জাকাতের পরিভাষিক অর্থ: নিজ অর্জিত ধন-সম্পদ থেকে আল্লাহ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট ও ফরজকৃত অংশ দেওয়া। জাকাত বণ্টনের খাতগুলো পবিত্র কোরআনের সুরা আত-তাওবার ৬০ নম্বর আয়াতে জাকাত বণ্টনে আটটি খাত আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করেছেন। এই খাতগুলো সরাসরি কোরআন দ্বারা নির্দিষ্ট এবং যেহেতু তা আল্লাহর নির্দেশ, তাই এর বাইরে জাকাত বণ্টন করলে তা ইসলামি শরিয়তসম্মত হয় না।

জাকাত কে কে পাবেন

ক. ফকির (যার কিছুই নেই); খ. মিসকিন (যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই); গ. জাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য জীবিকা নেই); ঘ. নওমুসলিমদের(আর্থিক সংকটে থাকলে); ঙ. ক্রীতদাস (মুক্তির উদ্দেশ্যে); চ. ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশি, ছ. মুসাফির (যিনি ভ্রমণকালে অভাবে পতিত)।

হাদিসমতে, এগুলো ফরজ সাদকাহের খাত এবং নফল সাদকাহ এই আট খাতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পরিসর আরও প্রশ্বস্ত। উল্লিখিত খাতসমূহে জাকাত বণ্টন করতে হয় সঠিক পন্থায়। অনেকে জাকাতের অর্থে শাড়ি ক্রয় করে তা বণ্টন করে থাকেন। এভাবে জাকাত আদায় হয়ে গেলেও আসলে প্রকৃতপক্ষে জাকাত গ্রহণকারীর তেমন উপকার হয় না। তাই জাকাত বণ্টনের উত্তম পন্থা হলো: জাকাত যাদের প্রদান করা যায়, তাদের একজনকেই বা একটি পরিবারকেই জাকাতের সম্পূর্ণ অর্থ দিয়ে স্বাবলম্বী করে দেয়া।

হিসাব করার নিয়ম: ধর্মীয়ভাবে প্রত্যেক মুসলমানকে তার যাবতীয় আয়-ব্যয়-সম্পদের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব সংরক্ষণ করতে হয়। হিসাব সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বার্ষিক ভিত্তি একটি মৌলিক ধারণা। অর্থাৎ বছরের একটা নির্দিষ্ট দিন থেকে পরবর্তী বছরের একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত যাবতীয় আয়-ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখতে হয়। এই ‘দিন’ বাছাই করার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে, কোন মাসে দিন নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত কেউ কেউ হিসাব সংরক্ষণের সুবিধার্থে হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররমের কোনো দিন কিংবা অধিক পূণ্যের আশায় রমজান মাসের কোনো দিন বাছাই করে থাকেন। এই হিসাব সংরক্ষণ হতে হবে যথেষ্ট সূক্ষ্মতার সঙ্গে। সংরক্ষিত হিসাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইসলাম ধর্মের নিয়মানুযায়ী নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলে তবেই উক্ত ব্যক্তির ওপর জাকাত দেয়া বাধ্যতামূলক (ফরজ) হয়, অন্যথায় জাকাত দিতে হয় না।

এছাড়া কোম্পানি জাকাত দিলে ব্যক্তিগতভাবে জাকাত দিতে হবে না। অংশীদারি কারবার ও মুদারাবা ৫২.৫ তোলা রুপার মূল্যমান প্রথমে সম্পত্তির জাকাত দিতে হবে, মূলধনের নয়; এরপর লাভ বণ্টিত হবে। জাকাত ব্যক্তিগতভাবে লাভের ওপর হবে, এক ভাগ (২.৫%) দেবে মূলধন সরবরাহকারী এবং একভাগ (২.৫%) দেবে শ্রমদানকারী।

জাকাতমুক্ত সম্পদ: জাকাতমুক্ত সম্পদ সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের বাণীবাহক মুহাম্মদ [স.] বলেছেন, বাসস্থানের জন্য নির্মিত ঘরসমূহ, ঘরে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, আরোহণের জন্য পশু, চাষাবাদ ও অন্যান্য আবশ্যকীয় কাজে ব্যবহƒত পশু ও দাস-দাসী, কাঁচা তরিতরকারি এবং মৌসুমি ফলসমূহ যা বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না, অল্পদিনে নষ্ট হয়ে যায়, এমন ফসলে জাকাত নেই। যদিও হানাফি মাযহাব অনুসারে নিজে নিজে উৎপন্ন  ব্রব্যাদি, যথা বৃক্ষ, ঘাস এবং বাঁশব্যতীত অন্য সব শস্যাদি, তরিতরকারি ও ফলগুলোর জাকাত দিতে হয়।

হাদিসের আলোকে যেসব সম্পদগুলোকে জকাত থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো

জমি ও বাড়িঘর; মিল, ফ্যাক্টরি, ওয়্যারহাউস বা গুদাম ইত্যাদি; দোকানÑ এক বছরের কম বয়সের গবাদি পশু; ব্যবহার্য যাবতীয় পোশাক; বই, খাতা, কাগজ ও মুদ্রিত সামগ্রী; গৃহের যাবতীয় আসবাবপত্র, বাসন-কোসন ও সরঞ্জামাদি, তৈলচিত্র ও স্ট্যাম্প; অফিসের যাবতীয় আসবাব, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও নথি; গৃহপালিত সকল প্রকার মুরগি ও পাখি; কলকবজা, যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার ইত্যাদি যাবতীয় মূলধনসামগ্রী; চলাচলের যন্তু ও গাড়ি; যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম; ক্ষণস্থায়ী বা পচনশীল যাবতীয় কৃষিপণ্য; বপন করার জন্য সংরক্ষিত বীজ; জাকাতবর্ষের মধ্যে পেয়ে সে বছরই ব্যয়িত সম্পদ; দাতব্য বা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, যা জনস্বার্থে নিয়োজিত; সরকারি মালিকানাধীন নগদ অর্থ, স্বর্ণ-রৌপ্য এবং অন্যান্য সম্পদ। যে ঋণ ফেরত পাবার আশা নেই (স্থায়ী কুঋণ), তার ওপর জাকাত ধার্য হবে না।

মুহাম্মদ আকিল নবী

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০